মহেশখালী দ্বীপের বিচ্ছিন্ন উপদ্বীপ ইউনিয়ন ধলঘাটার জনগণের চলাচলের একমাত্র সড়কটি বর্ষা আসার আগেই বেহাল দশায় পতিত হয়েছে। ইউনিয়নের সাপমারার ডেইল থেকে সুতরিয়া ও নাছির মোহাম্মদ ডেইল পর্যন্ত সড়কটির এমন করুণ চিত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে দুশ্চিন্তার কালো ছায়া নেমে এসেছে। এলাকাবাসীরা বলছেন, সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে ধলঘাটার নাছির মোহাম্মদ ডেইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকালের এক পসলা বৃষ্টিতে কাদা–পানিতে সয়লাব হয়ে আছে পুরো সড়কটি। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই চলাচল করে ধলঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। রোগী, দিনমজুর থেকে শুরু করে কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের এই একটি পথ দিয়ে চলাচলে নির্ভরশীল থাকতে হয়। অথচ রাস্তাটির এমন অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিম উল্লাহ বলেন, প্রতিদিন সকালে কাজে বের হলে সবচেয়ে বড় চিন্তা হয় এই রাস্তাটা পার হবো কীভাবে। হেঁটে গেলেই পা কাদায় আটকে যায়; বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেলে গেলে পড়ে যাওয়ার ভয়। বৃষ্টি হলে পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।
ধলঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নূরুন্নবী জানায়, আমার বাসা থেকে স্কুলে যেতে ১৫ মিনিট লাগে, কিন্তু এই রাস্তায় কাঁদা আর পানি থাকায় সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। জামা–কাপড় ও ব্যাগ ভিজে যায়। ক্লাসেও ঠিকমতো বসতে পারি না। একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান বলে, বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে ভয় লাগে। অনেক সময় পড়ে গিয়ে ব্যাথাও পাই। এই রাস্তাটা ঠিক না করলে আমরা স্কুলে যেতে পারবো না।
ধলঘাটা ইউনিয়নের এই প্রধান সড়কটি দিয়ে প্রতি মাসে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পার্শ্ববর্তী মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল ও নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিদর্শনে যাতায়াত করে থাকেন। অথচ এই সড়কেই তাদের যাতায়াতের অবস্থা করুণ। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাতারবাড়িতে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ধলঘাটার গা ঘেঁষে বাস্তবায়িত হচ্ছে, অথচ এই ইউনিয়নের মানুষ রয়ে গেছে অন্ধকারে।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল খালেক বলেন, চেরাগের নিচেই অন্ধকার। কত মন্ত্রী, সচিব আসে এই রাস্তা দিয়ে কিন্তু কারো নজর পড়ে না। এই রাস্তাটা ভেঙে গেলে পুরো ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মহেশখালী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী বনি আমিন জনি বলেন, ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি এলাকার সড়কগুলো সংস্কারের বিষয়ে আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। বর্ষার শেষে রাস্তাগুলোর জরুরি সংস্কার কাজ করা হবে। বরাদ্দ ও প্রকল্প প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাহার ইকবাল দাদুল বলেন, এই রাস্তাটা সংস্কার করা খুবই জরুরি। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই, যার মাধ্যমে বড় কোনো সংস্কার কাজ করতে পারি। তবুও আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগে বারবার বলে যাচ্ছি। যদি তারা সাড়া দেয়, তাহলে কিছু করা সম্ভব। তিনি বলেন, সরকার যেভাবে মাতারবাড়িতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সেভাবে ধলঘাটা ইউনিয়নের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও নজর দেওয়া দরকার। নয়তো এখানকার মানুষ উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।











