বাবা, শুধু তোমার জন্য

সুইটি চৌধুরী পূর্বা | শনিবার , ১৪ জুন, ২০২৫ at ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দুটি বর্ণের একটি মিষ্টি শব্দ বাবা। একটি গভীরতম অনুভূতির নাম বাবা। আমার কাছে, এই জীবনের মানুষ হিসেবে যত পূর্ণতা, যত প্রাপ্তি সব বাবার জন্যই। বাবা ছাড়া এই জগৎটা যায় না তো ভাবা! বাবা আমার এই জীবনে জ্বালিয়ে দেওয়া আলো, যাঁকে ছাড়া পৃথিবীটা সত্যিই যেন কালো। বাবা, যিনি সারা জীবন ধরে বহন করেন সন্তানের সব দায়িত্ব, কর্তব্য। ভরণপোষণসহ তাকে মানুষের মত মানুষ করতে গিয়ে, কখনো পথ চলতে, চলতে ক্লান্ত হয়ে যান! তখন হয়ত সন্তানের মুখ মনে পড়ে যায় আবার উঠে দাঁড়ান, তাঁর কাঁধের উপর যে এখনো অনেক কর্তব্য বাকি! আরো যে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এসব ভাবনা যাঁকে ভাবিয়ে জীবনে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়, তিনিই বাবা। বাবা বহন করেন, সহ্য করেন সন্তানদের সমস্ত দুঃখ, যন্ত্রণা। কখনো দুঃখ পেলেও ভারাক্রান্ত মনে মুখ ফুটে কখনো বলেন না শুধু অন্তরআত্মা কেঁদে মরে তাঁর সন্তানদের জন্য। আজ বলছি, আমার বাবার কথা, যাঁর হাত ধরেই আমি হাঁটতে শিখেছি, নতুন আলোয় পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ মেখেছি। ভালোবাসতে শিখেছি প্রকৃতি ও মানুষকে। পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত চৌধুরী বাড়িতে জন্ম হলেও বিরাট বাড়ির জমিদারী ভাবধারার কিছুই বাবাকে স্পর্শ করেনি, বেঁধে রাখতে পারেনি। গ্রামের হাবিলাসদ্বীপ হাইস্কুলে মেট্রিক পাস করেই উচ্চ শিক্ষার জন্য স্যার আশুতোষ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে বি,কম পাস করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। জীবনের সুদীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর শিক্ষকতার মত মহান পেশায় নিয়োজিত থেকে শিক্ষার্থীদের মানুষ করেছেন নিজের সন্তানতুল্য মমতায়। মনে পড়ে শৈশবের স্মৃতি, স্কুল থেকে ফিরে গাছেদের সাথে বাগান পরিচর্যায় সময় কাটাতেন, আমি দেখতাম, নিবিড় মমতায় কখনো গাছে পানি দিচ্ছেন, কখনো আপন মনে ওদের সাথে কথা বলতেন! আমি জানতে চাইলে বলতেন, ‘তুমিও ওদের সময় দাও, ভালোবাস, ওরা তোমার সাথেও কথা বলবে’। তাঁর আরো ছিল পোষা কুকুর, বিড়াল, টিয়া পাখি আর গিনিপিগ। খাঁচায় থাকা বাবার শখের টিয়া পাখিটা আমার নাম ধরে ডাকলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতাম। বাবা কখনো ওকে নিজের হাতে কলা খাওয়াতেন, কখনো গিনিপিগকে কোলে নিয়ে আদর করতেন, ঘাস খাওয়াতেন। বাবা আমার খুবই সংগীত প্রেমী। গান শুনতে বাবা খুব ভালোবাসেন। বাড়িতে তখন ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল, যেখানে বাবা হেমন্ত, মানবেন্দ্র, সাগরসেনের রবীন্দ্র, আধুনিক গান শুনতেন। আমিও গানের অনেক অর্থ নাবুঝেই সুর আর আবেদন শুনেই ভালোবেসে ফেলি গানকে যা পরবর্তীতে আমাকে সংগীত শিক্ষায় উৎসাহিত করে। বাবা, আমার মফস্বল শহরের নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে গান, নাচ এগুলো শেখানোর জন্য দূরে শহরে নিয়ে যেতেন প্রতি সপ্তাহে। মাও শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন বলে, মায়ের কাজেও বাবা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যেতেন সবসময়। এভাবে আমরা তিনবোনকেই পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন বাবা। বাবার কাছেই শিখেছি, সংসারে ত্যাগই সব। যে মানুষ যত বেশি ত্যাগ করতে পারবে, সে ততই সুখী। আর শিখেছি, মানুষকে ভালোবাসায় প্রকৃত সুখ, পরম ধর্ম। একজন মানুষ জীবনে এত ত্যাগ করতে পারেন তাঁর পরিবারের জন্য, সন্তানদের জন্য, তা শুধু বাবার কাছেই শিখলাম। তাই আমার বাবা, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। বাবার মুখের ‘মা’ ডাকটি শুনতে আর বাবার মুখের হাসি দেখতে খুব ভালোবাসি। আগামীকাল বিশ্ব বাবা দিবসে সকল বাবাকে জানাই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। প্রতিটি দিনই হোক সন্তানের কাছে বাবাকে ভালোবাসার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফেরারী পাখি
পরবর্তী নিবন্ধবাবা