নতুন অর্থবছরে শুল্কের হারে পরিবর্তন আসায় প্রতিবারের মত এবারও বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম কমবেশি হবে।
২০২৫ অর্থবছরের টাকা জমানোর ‘খরচ’ কমতে যাচ্ছে। দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে ই–বাইক, অ্যাম্বুলেন্স, বাস ও ক্যান্সারের ওষুধসহ বেশ কিছু তৈজসপত্রে।
ব্যাংকে টাকা জমা : এক লাখ টাকার পরিবর্তে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব রয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে খরচ কমতে পারে।
এলএনজি : তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস–এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব রয়েছে নতুন অর্থবছরে। এর প্রভাব জ্বালানি পণ্যটির দাম কমতে পারে।
তৈজসপত্র : পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট ও বাটিসহ সব ধরনের তৈজসপত্র, হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র, টেঙটাইল গ্রেড ডেট চিপসের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরে এসব পণ্য আরও কম দামে মিলতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
তরল দুধ : এবার স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে যেসব পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ ও বলপয়েন্ট কলমের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
মনিটর : ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য : পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত, উভয় ধরনের পেট্রোলিয়াম আমদানিতে শুল্ক–কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরে। এসসব পণ্যের ওপর থেকে ট্যারিফ মূল্য প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
চিনি : পরিশোধিত চিনি আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত পণ্যটি কিছুটা কম দামে পেতে পারেন ভোক্তারা।
ক্যান্সারের ওষুধ : ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও ‘অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস’ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক–কর অব্যাহতি সুবিধা সমপ্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কোল্ড স্টোরেজ : কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরে। এ প্রস্তাব পাস হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কোল্ড স্টোরেজ ভাড়ার ক্ষেত্রেও।
কৃষি যন্ত্রপাতি : স্থানীয়ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাস–মাইক্রোবাস, ই–বাইক : প্রস্তাবিত বাজেটে যানবাহন খাতে বেশ কিছু শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব এসেছে। এর ফলে টায়ার, বাস–মাইক্রোবাস, ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি এবং ই–বাইকের দাম কমতে পারে। ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাসের শুল্ক–কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই ধরনের প্রস্তাব রয়েছে ১০–১৫ আসনের মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রেও। এছাড়া সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেক্ট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
টায়ার : টায়ার উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণের শুল্ক কমানোর প্রস্তাবও রয়েছে নতুন অর্থবছরে।
হিমায়িত মাংস : বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর মাংস ও ভক্ষণযোগ্য উপাদানের আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে গরু, মহিষ জাতীয় প্রাণী, ছাগল ও ভেড়ার হিমায়িত মাংস।
সামুদ্রিক মাছ : বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের আমদানি শুল্কও ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের স্যামন ও টুনা, মাছের মাথা–লেজ, টিনে থাকা মাছের টুকরো বা গুড়া।
পাস্তা : পাস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের সিরিলিক খাবারের আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। নন অ্যালকোহলিক বেভারেজ, খনিজ পানি, মিষ্টিযুক্ত অথবা ফ্লেভারড পানির আমদানি শুল্ক দেড়শ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১০০ শতাংশ।
জ্বালানি পণ্য : বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি পণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে ২০ থেকে একশ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে গ্যাসীয় অবস্থায় আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাসের শুল্ক একশ শতাংশ থেকে এক লাফে শূন্যে নামানো হয়েছে। আংশিক পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামসহ অন্যান্য ভারি তেল ও প্রিপারেশনের আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। রিসাইকেলড লুব্রিকেটিং ওয়েল ও রিসাইকেলড লুব বেইজ ওয়েলের আমদানি শুল্কও ২০ শতাংশ থেকে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে।
প্লাস্টিক পণ্য : প্লাস্টিকের তৈরি বাঙ, টেবিল বা কিচেন ওয়্যার, পলিমারের বস্তা ও ব্যাগ, প্লাস্টিকের তৈরি দরজা–জানালা, ফ্রেম, থ্রেশ হোল্ড, স্পুল–ক্যাপ–ববিন এবং এ ধরনের অন্যান্য পণ্যে আমদানি শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।
আমদানি করা জুতা–জামা : পুরুষ ও নারীদের বিভিন্ন ধরনের আমদানি করা পোশাক ও জুতার আমদানি শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে–ছেলেদের শার্ট, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, ব্রেস ওভারঅল, বিব, ব্রিচেস, সিন্থেটিকের শর্টস ও অন্তর্বাস। জার্সি, পুলওভার, ওয়েস্ট কোট, কার্ডিগান বা এ ধরনের পোশাকও রয়েছে তালিকায়। স্টকিং, মোজা ও এ ধরনের হোসিয়ারি পণ্যের দামও কমতে পারে। ভেস্ট, ব্রিফ, প্যান্টি, ব্রেসিয়ার, নেগলিজেস, বাথরবস, ড্রেসিং গাউন, শাল, স্কার্ভ, মাফলার, ম্যান্টিলাস (এক ধরনের ওড়না), নেকাব (ভেইল) বা এ ধরনের পোশাকের শুল্কও কমানো হয়েছে। রাবার, প্লাস্টিক, চামড়া বা কাপড়ের জুতার আমদানি শুল্কও ৪৫ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।
এবার আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে ১১০টি পণ্যের ক্ষেত্রে। এই তালিকায় রয়েছে– বিভিন্ন ধরনের ইয়ার্ন বা আঁশ, নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর, রিয়্যাক্টরের বিভিন্ন অংশ, বয়লার, হাইড্রলিক টার্বাইন, গ্যাস টার্বাইন, মিল্কিং মেশিন ও ডেয়রি মেশিন এবং এগুলোর কিছু যন্ত্রাংশ। ওয়াইন–সেডার ও ফলের রস উৎপাদনের যন্ত্র, চিনির মিলের যন্ত্র, পোল্ট্রির ইনকিউবেটর ও ব্রুডার এবং এগুলোর যন্ত্র, স্পিনিং মিল–বেকারি–ব্রুয়ারির যন্ত্র, এমআরআই যন্ত্র, বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, হাউইটজার (এক ধরনের কামান), মর্টার, রকেট লাঞ্চার, ফ্লেইম থ্রোয়ারস, গ্রেনেড লাঞ্চার, টর্পেডো টিউব এবং এ ধরনের অস্ত্র।
ডেটাবেইজ, অপারেটিং সিস্টেমস, ডেভেলপমেন্ট টুলস, ডেটা বা তথ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত সিকিউরিটি সফটওয়্যার, ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিঠ, ইন্টারনেট কলাবরেশন এবং প্রেজেন্টেশন টুলসের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে ৩০ জুন; ১ জুলাই শুরু হবে নতুন অর্থবছর।