পিএসএল শিরোপা জয়ে সিকান্দার রাজার অবিশ্বাস্য গল্প

ট্রেন্ট ব্রিজ থেকে দুবাই, আবুধাবী হয়ে লাহোর

স্পোর্টস ডেস্ক | মঙ্গলবার , ২৭ মে, ২০২৫ at ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট শেষে নটিংহ্যাম থেকে বার্মিংহামে পৌঁছে করেছেন ডিনার। দুবাইয়ে ব্রেকফাস্ট, আবু ধাবিতে লাঞ্চ, এরপর সন্ধ্যায় লাহোরে পৌঁছে পিএসএল ফাইনালে দলের শিরোপা জয়ের নায়ক। চমকপ্রদ অভিযানের গল্প শোনালেন সিকান্দার রাজা। গত শনিবার বিকেলে ট্রেন্ট ব্রিজে শোয়েব বাশিরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট হারান সিকান্দার রাজা। একটু পরই অলআউট হয় দল। ইনিংস ব্যবধানে হেরে যায় জিম্বাবুয়ে। সতীর্থরা যখন পারফরম্যান্সের কাটাছেঁড়া নিয়ে ব্যস্ত, রাজার আশ্চর্য ভ্রমণের তখন শুরু। তাকে লাহোরে পৌঁছতে হবে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ফাইনাল শুরুর আগে। এমনিতে এই ফাইনাল খেলার কোনো সম্ভাবনা ছিল না রাজার। ফাইনালের দিনটি তো ইংল্যান্ডজিম্বাবুয়ে টেস্টের চতুর্থ দিন। তবে টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়ে গেল তিন দিনেই। রাজা শুরু করলেন নতুন অভিযান। পিএসএল ফাইনাল শুরু হতে তখন ২৪ ঘণ্টারও কম সময় বাকি। নটিংহ্যাম থেকে এক বন্ধুর গাড়ীতে চড়ে তিনি ছুটলেন বার্মিংহামের পথে। নিকটস্থ বিমানবন্দর সেখানেই। বিজনেস ক্লাসের কোনো টিকেট ছিল না বিমানে। ইকোনমি ক্লাসেই খুশি মনে দুবাইয়ের পথে উড়াল দিলেন রাজা। সেখানে ছয় ঘণ্টার বিরতি। দুবাই থেকে আবার গাড়ীতে তিনি রওনা হলেন আবুধাবির পথে। লাহোরের ফ্লাইট সবচেয়ে কাছাকাছি ছিল সেখানেই। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যখন পিএসএল ফাইনালের টস হলো, রাজা তখনও মাঠে নেই। লাহোর বিমানবন্দর থেকে তখন তিনি মাঠের পথে। তবে লাহোর কালান্দার্সের একাদশে তাকে রাখা হয়েছে ততক্ষণে। টসের মিনিট দশেক আগে বিমানবন্দরে নেমে টসের পর মাঠে আসা সেই রাজাই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠলেন ফাইনালের শেষ সময়ের রাজা। লাহোরের রুদ্ধশ্বাস জয়ের নায়ক। রাজাকে পাওয়া যাবে কি না, এই অনিশ্চয়তায় দুটি একাদশ তৈরি রেখেছিল লাহোর। একটিতে ছিলেন রাজা, অন্যটিতে রাজার জায়গায় সাকিব আল হাসান। বিমান ঠিক সময়ে লাহোরে আসায় এবং সব প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হওয়ায় রাজাকে নিয়েই মাঠে নামতে পারে লাহোর। বল হাতে রাইলি রুশোর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন রাজা। পরে ছয় নম্বরে যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, ম্যাচ তখন লাহোরের প্রায় নাগালের বাইরে। জয়ের জন্য ২০ বল প্রয়োজন ছিল ৫৭ রানের। বোলিং করছিলেন কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের সেরা বোলার মোহাম্মাদ আমির। তবে ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই আমিরকে চার ও পরের বলে ছক্কায় রাজা জানিয়ে দিলেন ম্যাচ এখনই শেষ নয়। পরের দুই ওভারে ঝড় তুললেন কুসাল পেরেরা। খুররাম শাহজাদকে দুটি ছক্কা মারলেন তিনি, ১৯তম ওভারে আমিরের বলে মারলে দুটি চার ও একটি ছক্কা। সমীকরণ চলে এলো নাগালে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ১৩ রানের। প্রথম তিন বলে এলো পাঁচ রান। বাকি তিন বলে যখন প্রয়োজন আট রান। ফাহিম আশরাফের বলে অসাধারণ এক শটে ডিপ পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে দিলেন রাজা। পরের বলটিতেই চার মেরে হুঙ্কার ছুড়লেন তিনি। মেতে উঠলেন খ্যাপাটে উদযাপনে। তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে বাধঁনহারা উল্লাসে মেতে উঠল সতীর্থরা। ৭ বলে অপরাজিত ২২ রান। ২০২ রান তাড়ায় ৬ উইকেটে জিতে যায় লাহোর কালান্দার্স। টিটোয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার রেকর্ড এটিই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তানে জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ফাহিম
পরবর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকের ২০ বছর