নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার থেকে খতিবেরহাটমুখী রাস্তাটি যেন উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে পড়ে থাকা এক মরণফাঁদ। এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করলেও এর দুরবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। শহরের একদম কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও রাস্তার বেহাল দশা যেন একটি অনুচ্চারিত অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে পথচারী, শিক্ষার্থী, রোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে।
চট্টগ্রামের মতো একটি বাণিজ্যিক শহরে মানুষ যখন বসতি গড়েন, তখন তাদের প্রত্যাশা থাকে উন্নত সড়ক, নিরাপদ চলাচল এবং প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা। কিন্তু খতিবেরহাটমুখী রাস্তায় পা রাখলেই সেই প্রত্যাশার জগৎ ভেঙে পড়ে। কাদায় ভরা গর্ত, রাস্তার ওপর জমে থাকা বৃষ্টির পানি, কোথাও কোথাও পিচঢালাই উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট ডোবা– যেন উন্নয়নের প্রতিচ্ছবির বদলে এক অব্যবস্থাপনার জলছবি। সড়কের দূরবস্থার কথা জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা হাসিনা বেগম বলেন, “প্রতিদিন বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতে গিয়ে আতঙ্কে থাকি। কখন যে রিকশা উল্টে পড়ে যাই, বলা যায় না।” একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন স্থানীয় কলেজছাত্র সাদমান ও রফিক। তারা বলেন, “এই রাস্তায় হাঁটতে গেলে জুতা থেকে শুরু করে কাপড় পর্যন্ত কাদায় ভরে যায়। অনেক সময় ক্লাসে ঢুকতে লজ্জাও লাগে।”
পথচারীদের অভিযোগ, সড়কের কর্দমাক্ত ও গর্তযুক্ত অংশে প্রায়ই রিকশা উল্টে পড়ে। সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের জন্য তো এ রাস্তাটি যেন এক মৃত্যুফাঁদ। কয়েকদিন আগেই একটি সিএনজি অটোরিকশা গর্তে আটকে পড়ে উল্টে যায়। যাত্রীদের একজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা বলেন, বছর কয়েক আগে রাস্তা প্রশস্তকরণের নামে কিছু মাপঝোক হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, নতুন করে রাস্তা নির্মাণ হবে। কিন্তু সেই কাজ আর শুরুই হয়নি। তার বদলে সময় গড়িয়েছে, কিন্তু রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, সেখানে কিন্তু সিডিএর কাজ চলমান। আমরা প্রতিনিয়ত খবর রাখছি, কখন কাজ শেষ হচ্ছে। সিডিএর কাজ শেষ হলেই আমরা রাস্তাটির কাজ ধরব। আগের আমলে কি হয়েছে এগুলো বলতে চাই না। আমি কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা দেখেছেন আমি দায়িত্বে আসার পর নগরবাসীর জন্য সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
স্থানীয়দের দাবি, খতিবেরহাটমুখী রাস্তাটি অবিলম্বে সংস্কার করতে হবে। কেবল মেরামত নয়, এর উন্নয়ন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করাই হতে হবে অগ্রাধিকার। এই রাস্তা যদি সচল না হয়, তবে নাগরিক জীবন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি শহরের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও পড়বে চাপে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, জনভোগান্তির এই দীর্ঘ অধ্যায়কে শেষ করে একটি নিরাপদ ও কার্যকর সড়ক ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কারণ, উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা প্রতিটি নাগরিকের জীবনে ছোঁয়া দিয়ে যায়।