ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষে একীভূত ব্যাংকটির জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে বলে গতকাল সোমবার চ্যানেল ২৪ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো হল– সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।
এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটির পর্ষদ সরাসরি চট্টগ্রামভিত্তিক আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণও পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে তার কাছে যায়। আর এক্সিম ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল শেখ হাসিনার সময়ের আরেক প্রভাব খাটানো ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের। একীভূত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে এসব ব্যাংকের সম্পদ পর্যালোচনাও করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। খবর বিডিনিউজের।
সোমবার রাতে প্রচারিত চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনে গভর্নর বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে এসব ব্যাংককে সরকারি মালিকানায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পুঁজি যোগান দেওয়া হবে। তারপর বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে। এটা আস্থার খবর কারণ এটা সরকারিকরণ করা হবে। সরকার সাময়িকভাবে এটাকে নিয়ে নেবে। একই সঙ্গে সেগুলোকে মূলধন যোগাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকতো ইতোমধ্যে তাদের তারল্য সহায়তা দিচ্ছে। তারপর আমরা শেয়ারগুলোকে আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করব; পুনর্গঠন হওয়ার পরে। তিনি বলেন, পুনর্গঠনের সময়টায় আমরা অংশীদারত্ব রাখব। এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা, যেটা আমরা নতুন ব্যাংক করব। পরে সেটা নতুন বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করে দেওয়া হবে।
এর আগে বিগত সরকারের আমলে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত বা মার্জার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে পট পরিবর্তনের পর সে উদ্যোগ আর এগোয়নি। দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করতে ২০২৪ সালে ব্যাংক দুটির পর্ষদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে একটি এমইউ চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল। ওই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ সংকেতের পর ন্যাশনাল ব্যাংককে (এনবিএল) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তখন ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে মার্জার হওয়ার বিষয়ে আপত্তি থাকায় তা বাতিল হয়ে যায়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে। এর অধীনে দেউলিয়া হওয়া বা দেউলিয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংককে ‘ভালো করার স্বার্থে’ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় নিতে পারবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংককে ‘ভালো করার স্বার্থে’ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এরপরই দুর্বল ছয় ব্যাংককে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বললেন গভর্নর।
তিনি বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে যাব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমরা প্রথমটা সফলভাবে করতে পারলে আমরা পরেরটায় যাব। প্রথমটা থেকে আমরা শিক্ষা নেব কী ভুল হতে পারে। এটা ধাপে ধাপে হবে। এটা দুই–তিন মাসের ব্যাপার নয়। রেজুলেশনের প্রথম তিন মাস একটা কঠিন সময়। একীভূত করার পর ওই ব্যাংকে বিদেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী যারাই নেবেন তারা এটা সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা চাই এটার মূলধন বাড়বে, এটার তারল্য বাড়বে, প্রত্যেকটা গ্রাহক তার টাকা পাবে, গ্রাহকদের কোনো লোকসান হবে না।