চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেছেন, আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ভূমিসেবা পুরোপুরি হয়রানিমুক্ত ও জনবান্ধব করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। মিউটেশন, এলডি ট্যাক্স ও খতিয়ান সেবা এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো সময়ে যে কোনো নাগরিক ভূমি অফিসে না এসে ঘরে বসে নিজেই নামজারির আবেদন, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, খতিয়ান সেবা ও ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। গোটা বাংলাদেশ একটা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের মধ্যে আছে।
গতকাল রোববার নগরীর সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী ভূমি মেলা–২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমরা এখন অফিসে আর যেতে চাই না। আমার যে অভিজ্ঞতা, দেখা গেল আমার কোনো আত্মীয় ভূমি উন্নয়ন কর দেবে, নামজারি করবে। আমাকে সকাল–বিকাল পীড়াপীড়ি করছে, একটু তহসিলদার সাহেবকে বলে দেন না। যেন আমার সঙ্গে একটু ভালো করে কথা বলে।
তিনি বলেন, এখানে ডিআইজি মহোদয় আছেন, উনাকে সারা দিন উনার আত্মীয়–স্বজন, এলাকাবাসী ফোন করে বলেন, থানায় একটু বলে দিবেন, আমার একটু কাজ আছে। মানুষজন এখনো অফিসে যেতে ভয় পায় উল্লেখ করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, যতদিন আপনি সেবা নিতে আমাদের কাছে আসবেন, সামনাসামনি আসবেন, ততদিন আপনাকে আসলে হয়রানির শিকার হতেই হবে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, আপনি আপনার কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকবেন, অবসর সময়ে ডিজিটাল কোনো কিছু ব্যবহার করে আবেদন করে আপনার সেবাটা পেয়ে যাবেন। এটা সবচেয়ে আদর্শ পন্থা, যেটা আমরা সবাই মনে মনে চাই।
তিনি বলেন, আমি চাই থানা থেকে একটা সেবা পাব, কিন্তু থানায় যাব না। ভূমি থেকে একটা সেবা পাব, ভূমিতে যাব না। এভাবে বাংলাদেশে যত অফিস রয়েছে সবগুলো ধীরে ধীরে সেই অবস্থায় নিয়ে যাব। সবাই সবকিছু পেয়ে যাবেন, কিন্তু কোনো অফিসে ধর্না দিতে যেতে হবে না। আর যখন কোনো অফিসে ধর্না দিতে না যাবেন, তখন আপনাকে কোনো হয়রানির শিকারও হতে হবে না। বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, দেশে জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ কম বলে জমির চাহিদা বেশি। তাই এ নিয়ে বিরোধও বেশি। দেশে মোট মামলা ৩৫ লাখ; তার মধ্যে বেশি জমি সংক্রান্ত। যদি এ বিরোধ নিষ্পত্তি করা যেত অনেক অপরাধ কমে যেত। সবার আগে ভূমি সংস্কার দরকার। ডিজিটাল সেবাগুলোর সাথে অভ্যস্ত হতে হবে। অনেকের ভয় থাকে, কীভাবে করব। একটু অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সবাই পারবেন। আমরা সেবা দিতে চাই। মানুষের অনেক প্রত্যাশা জানি, তবে আমাদেরও অত সেবা দেবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমরা সেবা দিতে সব সময় চেষ্টা করি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মনোয়ারা বেগম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
জেলা প্রশাসক ভূমি মেলা সেবাসমূহ উল্লেখ করে সকলকে সক্রিয়ভাবে ভূমি মেলায় অংশগ্রহণ এবং ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানে আহ্বান জানান। মেলা উদ্বোধনের আগে র্যালির আয়োজন করা হয়। পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভূমি ব্যবস্থাপনার নতুন অনলাইন সেবাসমূহ গম্ভীরা গানের তালে সকলের সামনে উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, মেলা উপলক্ষে সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে ১২টি স্টল বসানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি স্টলে মহানগরের ৬টি সার্কেলের যাবতীয় ভূমি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২টি স্টলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখা ও রেকর্ডরুমের সেবা, ২টি স্টলে চট্টগ্রাম জেলার জরিপ ও ভূমির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সেবা এবং অপর ২টি স্টলের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের ভূমি বিষয়ক সেবা অর্থাৎ ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই–নামজারীর আবেদনসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। মেলা আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে।