লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি৪ এর গভর্নর লায়ন কোহিনুর কামাল বলেছেন, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনে স্বতন্ত্র আই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি পুরোদমে চালু হলে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে। এখানে তৈরি হবে আই স্পেশালিস্ট। নিয়োগ পাবে অনেক লোকবল এবং সেবা পাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পুরো চট্টগ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। এক কথায় বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম। এ বছর এই ইনস্টিটিউটে ১০ জন ছাত্র ভর্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর জাকির হোসেন রোডে সিএলএফ কমপ্লেক্সের হালিমা–রোকেয়া মেমোরিয়াল হলে লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি৪ এর ২৮তম বার্ষিক জেলা সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন ভবন ঘিরে ১৫ বছর মেয়াদি মাস্টার প্ল্যান তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হলে এটিই হবে দেশের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সকল আঙ্গিকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
চলতি বছরের সেবা কার্যক্রম প্রসঙ্গে জেলা গভর্নর বলেন, এ বছর লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি৪, বাংলাদেশের আওতাধীন লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের সেবা কর্মসূচি আরো গতিশীল এবং গরিব ও অসচ্ছল রোগীদের চক্ষু সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রয়োজনীয় মেশিনারি ক্রয় করার জন্য আন্তর্জাতিক লায়ন্স ফাউন্ডেশন হতে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকার অনুদান প্রদানের প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। অনুদান পাওয়া গেলে রোগীরা উন্নত চক্ষু সেবা গ্রহণ করার সুযোগ পাবে। এছাড়া কাানাডিয়ান সেচ্ছাসেবী সংগঠন জিকো ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ও লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ও লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার চকরিয়া, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, রাউজানসহ বিভিন্ন এলাকায় ৪১টি স্থায়ী প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়মিত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে লায়ন্স জেলার বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় একাধিক আই ক্যাম্প থেকে ৮ হাজার ৬৩৯ জনের বেশি গরিব রোগীকে বিনামূল্যে ছানি অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলা ক্লাবসমূহের উদ্যোগে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষণ ক্যাম্প আয়োজন, প্রযুক্তিগত এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দৃষ্টিহীনদের সহায়তাকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
কোহিনুর কামাল বলেন, বর্তমান বিশ্বের ২১০টি দেশে ৪৮ হাজার ক্লাবের মাধ্যমে ১৪ লাখের অধিক লায়ন সদস্য পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে মানব কল্যাণে সেবাকর্ম পরিচালনা করে চলেছেন। বর্তমান বাংলাদেশে মাল্টিপল জেলা ৩১৫–এর ৬টি লায়ন্স জেলার ৯১৯টি লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে ২৪ হাজার ৪১৮ জন লায়ন সদস্য সর্বদা সেবা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছেন। স্বাধীনতার পর চট্টলার সূর্য সন্তান লায়নিজমের জনক সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম আর সিদ্দিকী বাংলাদেশে লায়নিজমের শুভ সূচনা করেন। বাংলাদেশে লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি৪, চট্টগ্রাম একমাত্র জেলা, ঢাকার বাইরে কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে ইতিমধ্যে ৯৬টি ক্লাবের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩৬৮ জন লায়ন সদস্য দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এ জেলা ছাড়াও লায়ন কার্যক্রম সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র লিও জেলা বলিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি৪ ‘যত্নের ছায়া ছড়ায় মায়া’ স্লোগানে মানব কল্যাণে সেবাকর্ম পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, দেশে করোনাকালীন লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি৪ এর সাবেক গভর্নর লায়ন কামরুন মালেকের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মা শিশু হাসপাতালে পরিপূর্ণ অক্সিজেন সুবিধাসহ সুসজ্জিত ২০টি বিশেষায়িত বেড স্থাপন করে সেবার জগতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া লায়ন্স জেলার সাবেক গভর্নর লায়ন মনজুর আলম মনজু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সার্বিক মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ সাধন করার লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি ওয়ান ক্লাব ওয়ান চাইল্ড ভিত্তিতে একটি প্রকল্প চালু করেছেন। এ প্রকল্পের অধীন জেলা–৩১৫ বি–৪ এর আওতাধীন ৩১টি ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৯ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
প্রেস কনফারেন্স কমিটির সেক্রেটারি লায়ন নিশাত ইমরানের সঞ্চালনায় এবং প্রেস কনফারেন্স কমিটির চেয়ারম্যান লায়ন মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু, দ্বিতীয় ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন কামরুজ্জামান লিটন, ক্যাবিনেট সেক্রেটারি লায়ন বেলাল উদ্দিন চৌধুরী, ট্রেজারার লায়ন ইমতিয়াজুল ইসলাম, ২৮তম বার্ষিক জেলা সম্মেলন চেয়ারম্যান লায়ন শফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি লায়ন সাব্বির আহমেদ, ট্রেজারার লায়ন এমএইচ শাহ বেলাল, সংবাদ সম্মেলন ট্রেজারার লায়ন খোরশেদ আনোয়ার চৌধুরী, সদস্য লায়ন জসিম উদ্দিন, নুরুল আবছার, লায়ন সেলিম রেজা চৌধুরী, লায়ন আবু বক্কর সিদ্দিকী, লায়ন পারভীন মাহমুদ, লায়ন ওসমান গণি, লায়ন এমএস আই ভুইয়া, লায়ন জাহাঙ্গীর মিয়া, লায়ন শাখাওয়াত আলী, লায়ন সারওয়ার মিক্সিম ও লায়ন তাহের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।