এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গুর প্রতিরোধ সম্ভব

‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ দ্রুত গড়ে তোলা হোক

| রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

বর্ষার আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেএমন খবরে নগরবাসী উদ্বিগ্ন। গত ২৩ মে দৈনিক আজাদীতে ‘বর্ষার আগেই ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি’ শীর্ষক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে দেশে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। এই মৌসুমটিতে বিশেষ করে ভ্যাপসা গরমের সাথে ঝিরি ঝিরি কিংবা থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এটি এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য সহায়ক। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামেও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে এডিস মশা এবং এতে মশার বংশবিস্তারও তরান্বিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন বাসা বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে, ডাবের খোসা এবং পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ারে জমে থাকা পানিতেও মশার বংশবিস্তার হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আক্রান্তের হার বাড়ছে। চলতি মে মাস এখনো শেষ হয়নি। এরইমধ্যে গত মাসের চেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন যেহেতু বৃষ্টির মৌসুম, তাই ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়ার আশংকা রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৪ জনই পুরুষ। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন ১ জন। এছাড়া চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৩০ জন। এরমধ্যে নগরীতে ১০৭ জন এবং উপজেলায় ১২৩ জন। মারা গেছেন ২ জন। এছাড়া গত এপ্রিলে চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৩৩ জন। চলতি মে মাসের গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ জন। অর্থাৎ গত মাসের তুলনায় চলতি মাসের এখন পর্যন্ত সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।

এক গবেষণা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এরিন মরডেকাই বলেছেন, এশিয়া ও আমেরিকার ২১টি দেশের ডেঙ্গুর প্রকোপ ও জলবায়ুর ওঠানামার নানা তথ্য তারা খতিয়ে দেখেছেন এবং সেখানে ক্রমাগত তাপমাত্রা ও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট ও সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ডেঙ্গু সংক্রমণের হারকে প্রভাবিত করতে পারে এমন অন্যান্য কারণ, যেমন বৃষ্টিপাতের ধরন, ঋতু পরিবর্তন, ভাইরাসের ধরন, অর্থনৈতিক সমস্যা ও জনসংখ্যার ঘনত্বের দিকে নজর দিয়েছেন গবেষণা দলটি। এতে নিশ্চিত করা গেছে, ডেঙ্গু প্রকোপে তাপমাত্রার স্বতন্ত্র প্রভাব থাকার বিষয়টিও। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এরই মধ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ডেঙ্গুর মতো রোগের জন্য। ড. এরিন মরডেকাই বলেছেন, আমাদের গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, আরও খারাপ হতে পারে এই প্রভাব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। অনেক রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার (এনএসওয়ান) রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এর দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন কেবল রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। তখন জরুরি চিকিৎসা কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে রক্তের প্লাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক থাকে। আসলে প্লাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত বছর বিশেষ করে ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট ডেন২ এর সাবভ্যারিয়েন্ট কসমোপলিটনে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হার বেশি ছিল।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে অনেকে সিটি করপোরেশনের একার দায়িত্ব মনে করে থাকেন। আসলে শুধু সিটি করপোরেশনের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, এর প্রতিরোধে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সরকারি ও বেসরকারি সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগই পারে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে। তবে কিছুদিন আগে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ গড়ে তোলারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘এখানে একজন প্যাথলজিস্ট থাকবেন। ডেঙ্গু নির্ণয়ে যে টেস্ট তা এখানে নিশ্চিত করা হবে। যে কোনো রোগী এখানে এসে অত্যন্ত সাশ্রয়ী রেটে, বাইরে থেকে ৩০৪০ শতাংশ কমে এখানে সেবাটা পাবেন।’ এই ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ গড়ে তোলা হলে নগরবাসী পর্যাপ্ত সেবা পাবেন বলে আমরা মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে