গণ অভ্যুত্থানের যে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তা শেষ করতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল নয়, জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতেও তারা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছেন। বৈঠকে তার সরকারের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে অভ্যুত্থানের নেতাদের গঠিত দল এনসিপি। গতকাল শনিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন দলের নেতা নাহিদ ইসলাম। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বসেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন রাত পৌনে ১০টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকটি শুরু হয়। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
হাসিনা আমলের সব নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণার দাবি : প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে এনসিপি। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শেখ হাসিনার আমলে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনগুলোকে আইনগতভাবে অবৈধ ঘোষণা করা। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকায় কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও জানিয়েছে এনসিপি।
সাংবাদিকদের সামনে জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদদের পুনর্বাসনের ধীরগতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নাহিদ ইসলাম। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দ্রুত আয়োজনের মাধ্যমে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবের ওপরও জোর দেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নাহিদ বলেন, উনি ক্ষমতা নিতে চাননি। আমরাই উনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। উনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু তিনি কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তবে আমরা উনাকে বুঝিয়েছি, উনি যেন সকল কিছু বাদ দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সেটাকে লক্ষ্য রেখে যেন কাজ করে যান।
এনসিপির এ নেতা বলেন, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে একটা দাবি ছিল আমাদের, যেটা ৩০ দিনের ভেতরে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, পাশাপাশি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, জুলাই আন্দোলনে যারা আহত ও শহীদ হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও ধীরগতির ছিল। আর এই আর্থিক বিষয়টা যেন সঠিকভাবে হয় সেই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি।
সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। তাই এই নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য দ্রুত আয়োজন করা হয় সে বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। এর ফলে যে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে জনগণ যে দুর্ভোগ পৌঁছে সেটি সমাধান হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সর্বশেষ যে কথা হয়েছে তার মধ্যে ছিল সংস্কার এবং জুলাই অভ্যুত্থানের প্রোক্লেমেশনের বিষয়ে সরকার যেন একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যে এক সকল ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা হয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। এ বিষয়ে আমরা আজকে স্পষ্ট করেছি। তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা হয়েছেন।
এনসিপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অন্যদের মধ্যে ছিলেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা।