আলো কমিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে নাস্তানাবুদ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভূ–রাজনৈতিক কী সুবিধা হাসিল করতে পারবেন তা এখনও স্পষ্ট না হলেও তিন মাসের মধ্যে দুই বিশ্বনেতাকে এভাবে অপদস্ত হতে দেখে অনেক বিশ্বনেতাই যে এখন হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হতে দুইবার ভাববেন তা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। খবর বিডিনিউজের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, বুধবার ওভাল অফিসে হোয়াইট হাউজ মঞ্চায়িত এ নাটকের উদ্দেশ্যই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে চেপে ধরা, যা ফেব্রুয়ারিতে একই অফিসে জেলেনস্কির সঙ্গে হওয়া ঘটনার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প এদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে রামাফোসার মুখোমুখি হন। আফ্রিকার দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের নির্বিচারে হত্যা ও তাদের জমি দখল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ঐতিহাসিকভাবে ওভাল অফিসটি বিদেশি অতিথিদের সম্মান জানানোর স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু ট্রাম্প এখন এই কার্যালয়কে তুলনামূলক দুর্বল দেশের অতিথিদের বিব্রত করা কিংবা চাপে ফেলার জায়গা বানিয়ে ফেলতে চাইছেন বলেই মনে হচ্ছে। এ কারণে এখন অনেক দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরাই মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দ্বিধায় থাকবেন। বলা তো যায় না, ট্রাম্প কখন কাকে প্রকাশ্যে অপমান করে বসেন কিংবা এমন পরিস্থিতিতে ফেলেন যা বিব্রতকর। সেক্ষেত্রে মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে, তাও এমন এক সময়ে যখন চীন অনেক মার্কিন মিত্র ও অংশীদারদের কাছে টানতে চাইছে। বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দক্ষিণ আফ্রিকায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা প্যাট্রিক গ্যাসপার্ড বলেছেন, রামাফোসার সঙ্গে বৈঠককে ট্রাম্প লজ্জাজনক নাটকে পরিণত করেন, মিথ্যা চাতুরিপূর্ণ চলচ্চিত্র ও উত্তেজক কথাবার্তা বলে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। ট্রাম্পের শর্তে আলোচনা কারো জন্যই ভালো হয় না, এঙে এমনটাই লিখেছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের জ্যেষ্ঠ ফেলো গ্যাসপার্ড। অথচ ওভাল অফিসের এই বৈঠকটিকে দেখা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র–দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্ক মেরামতের একটি সুযোগ হিসেবে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ও শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব প্রকট করেছে। বুধবারের বৈঠকের শুরুটা ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ, কিন্তু টিভিতে রিয়েলিটে শো–র সাবেক উপস্থাপক ট্রাম্প কক্ষের আলো কমিয়ে দিতে বলেন এবং তারপর একটি ভিডিও ও কিছু ছাপা নিবন্ধ দেখিয়ে সেগুলোকে শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের ওপর নিপীড়নের প্রমাণ অ্যাখ্যা দেন।