যৌতুকের কারণে পরিবার ভাঙে : প্রতিরোধ গড়ে তোলা আবশ্যক

ইঞ্জিনিয়ার শাহনেওয়াজ | শুক্রবার , ২৩ মে, ২০২৫ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

যৌতুক বাংলা সমাজের এক পুরোনো কিন্তু, এখনো বিদ্যমান ভয়ংকর ব্যাধি। আইন, সভাসেমিনার কিংবা সচেতনতামূলক কার্যক্রম সত্ত্বেও এই প্রথা আজও তীব্রভাবে বেঁচে আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে যৌতুক নিয়ে নির্যাতন, পারিবারিক অশান্তি, আত্মহত্যা ও হত্যা এখন প্রায়ই শোনা যায় সংবাদ শিরোনামে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে যৌতুক সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা প্রায় ২,৫০০। ২০১৯ সালে ছিল ৩৯০টি, যা ২০২৪ সালে এসে দাঁড়ায় প্রায় ৬০০তে। তবে এটি শুধু ‘দর্শনযোগ্য চিত্র; এর বাইরেও হাজারো নির্যাতন দিনের পর দিন নীরবে ঘটে চলেছে।

যৌতুক শুধু আর্থিক চাপই সৃষ্টি করে না, এটি একটি পরিবারে ভাঙনের সূচনা ঘটায়। যৌতুক না পেয়ে অনেক নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মারধরের শিকার হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে কম যৌতুক দেওয়া স্ত্রীর জন্য তা ‘অযোগ্যতার’ তকমা তৈরি করে দিচ্ছে এবং পরিবারে ওই স্ত্রীকে অপমান ও হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। যৌতুকের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় স্বামীপক্ষ অনেক সময় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেয়। যার কারণে গলায় ফাঁস দেওয়া বা বিষপান করে আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটছে নানানদিকে। আবার যৌতুক না পেয়ে গলা চিপে হত্যা, কুপিয়ে হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়।

করণীয় ও প্রতিরোধের উপায়: স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, সামাজিক সংগঠনকে যৌতুকবিরোধী বার্তা ছড়াতে হবে। সমাজে বা এলাকায় যৌতুক ছাড়া বিয়ে হলে সমাজে সেটিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে হবে। নাটক, সিনেমা, সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌতুক বিরোধী গল্প ও বার্তা ছড়াতে হবে। নারীরা কর্মক্ষম হলে তারা যৌতুকপ্রথাকে অনেকটা প্রতিহত করতে পারে। এছাড়া আইনের কঠোর প্রয়োগ করে দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে যৌতুককে প্রতিরোধ করতে হবে।

যৌতুক শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি সমাজের মূল্যবোধের পচন। এটি আমাদের মাবোনদের আত্মমর্যাদা ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে এক নীরব যুদ্ধ। এই যুদ্ধ জয় করতে হলে পরিবার, সমাজ, প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদের সম্মিলিত ভূমিকা নিতে হবে। এখনই সময়, এই বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলে একটি মানবিক, সম্মাননীয় ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরবি ঠাকুর
পরবর্তী নিবন্ধএভাবেই কি আরব বিশ্ব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে