বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট অবৈধ ঘোষণার দাবি এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালতের এই আদেশের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ রিট মামলার ওপর মঙ্গল ও বুধবার কয়েক দফা শুনানির পর গতকাল বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে আদেশ দেয় বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ। ইশরাককে মেয়রের চেয়ারে বসাতে এক সপ্তাহ ধরে তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে আদালতের এই সিদ্ধান্ত এল। শপথ না পড়ানোর রিট আবেদন খারিজের পর আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন ইশরাক। খবর বিডিনিউজের।
রিট আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন। অন্যদিকে রিটকারী পক্ষে জবাব দেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে কয়েকটি ভুল থাকার দাবি তুলে রুল জারির আর্জি জানান মোহাম্মদ হোসেন। অন্যদিকে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যায়। সেটা করতে পারে মামলার বিবাদী পক্ষ। সেখানে আপিল না করে একজন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট মামলা করতে পারেন না।
বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশ পক্ষে পাওয়ার পর ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, যিনি এই রিট মামলা করেছিলেন, তার এ ধরনের মামলা করার এখতিয়ার নেই। তাছাড়া নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ ছিল। ফলে এ ধরনের বিষয়ের জন্য এটা সঠিক ফোরাম নয়। এ দুটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত আজ রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার দিকে ইংগিত করে ইশরাকের আইনজীবী বলেন, এ বিষয়ে সরকারের একজন উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি একটি দলের পক্ষ নিয়ে এ কাজ করেছেন। আমরা আশা করব, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সরকার এখন ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা ইশরাকের : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছে। শপথ না পড়ানোর রিট আবেদন খারিজের পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন ইশরাক। আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট জনভোগান্তির জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির এ সদস্য। এদিন বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে ‘ঢাকাবাসীর অবস্থান’ কর্মসূচিতে পৌঁছান ইশরাক হোসেন। সেখানে তিনি বলেন, সরকারের পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই আন্দোলনে আসতে বাধ্য হয়েছি আমরা।
নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এই যে আপনারা ৭ দিন নিরলস পরিশ্রম করে আন্দোলনকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, সেটার জন্য উনি (তারেক রহমান) আপনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আমি নিজেও আপনাদের কাছে চিরজীবন ঋণী থাকব। এই রিট খারিজের মধ্য দিয়ে সব শেষের আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে।
সরকারকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আজ যেহেতু আমরা রায় পেয়েছি, এটি নিয়ে কাজ চলছে। যদি আবারও টালবাহানা করে এই সরকার, আবারও কালক্ষেপণ করে এই সরকার, তাহলে কাল সকালেই আবার এখানে এসে আমরা ঘেঁরাও দেব। ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা সরকারকে পর্যবেক্ষণ করা হবে যে তারা কী করে। সেটার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কার্যক্রম বা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ সময় আদালতের রায় বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের যে দাবি, সেটি চলমান থাকবে বলেও জানান ইশরাক হোসেন।