ধীরে ধীরে আরো বাড়াতে হবে তৈরি পোশাক রপ্তানি

| বুধবার , ২১ মে, ২০২৫ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

পোশাক রপ্তানি খাতে সুখবর হলো, ২০২৫ সালের জানুয়ারিমার্চ সময়কালে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার যা ৫.৯৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ইইউ পোশাক আমদানির সামপ্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিমার্চ মাসে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯.০৬ শতাংশ। এ ছাড়া ইউনিট মূল্য ৩.৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিমার্চ সময়কালে, ইইউ পোশাক আমদানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে যা ১৬.৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ২৪.৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে ২০.২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গড় ইউনিটের দাম ২.৮৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ইইউতে চীনের পোশাক রপ্তানি ৬.৬৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ৫.৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেশি। তবে ইইউতে তুরস্কের পোশাক আমদানি ৪.১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারিমার্চ মাসে মোট ২.৩৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে ভিয়েতনামের রপ্তানি ১৮.০৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.১৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত, পাকিস্তান এবং কম্বোডিয়া ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ইইউ পোশাক বাজার থেকে যথাক্রমে ১.৪৪ বিলিয়ন ডলার, .০৮ বিলিয়ন ডলার এবং ১.১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

অন্যদিকে বাংলানিউজ জানায়, চলতি ২০২৪২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে পোশাক রপ্তানির ৮৩ শতাংশই হয়েছে ইউরোপআমেরিকার দেশগুলোতে। এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে। বাকি ৩৪ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায়যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ, ১১ দশমিক ১২ শতাংশ ও ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ সময়ে অপ্রচলিত বাজারেও তুলনামূলক ভালো রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে জাপান হয়ে উঠছে পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনায় বাজার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন বাজারে উত্তেজনার কারণে ইইউর প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়েও বেশি হলেও, ভবিষ্যতে চীনা ব্যবসায়ীরা ইউরোপে তাদের বাজার উপস্থিতি সমপ্রসারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁরা আরও বলেন, ২০২৫ সাল জুড়ে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার জন্য কাজের অর্ডার বৃদ্ধির প্রত্যাশিত বৃদ্ধির মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য ইইউ বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে মনোযোগ দিয়েছে। এরই ফলে এ ধরনের সাফল্য আসছে, ধীরে ধীরে বাড়ছে রপ্তানি আয়। তৈরি পোশাক রপ্তানির এই চিত্র দেশের শিল্পখাতের সামর্থ্যের প্রতীক বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, জাপানে রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের ওপরের উঠে আসা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে তারই প্রতিফলন। জাপান মূল্য ও মানের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। দেশটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিটি পিস পরিদর্শন করে গ্রহণ করে। মূল্যের ক্ষেত্রেও ভালো ও সৎ। জাপানে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হলো আমরা পোশাক প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স থেকে শুরু করে মান ও লেনদেনে দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছি।

তাঁরা বলেন, অপ্রচলিত অন্যান্য দেশের মধ্যে সেসব দেশে রপ্তানি বাড়ছে, যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের উদ্যোক্তাদের মানসিক ও যোগাযোগ আছে। যেমন তুরস্কের সঙ্গে আমাদের নানা দিক থেকে ভালো যোগাযোগ আছে। আমরা এখনো সেই যোগাযোগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। একইভাবে ব্রাজিল ও ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। এসব দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগামীতেও বাড়তে থাকবে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি ও বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র; যেখানে দেশের মোট রপ্তানির ১৭.০৯ শতাংশ, এবং তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশের বেশি যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট ওভেন পোশাকের প্রায় ২৬ শতাংশ, নিটওয়্যারের ১১.৭১ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইল পণ্যের ১৬.১২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।

তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) খাতের ব্যবসায়ী নেতারা উল্লেখ করেন, এই খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশ, যেমন ভিয়েতনাম ও ভারত ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে মাত্র ৭ শতাংশ শুল্কের সুবিধা পাচ্ছে ভিয়েতনাম, যেখানে বাংলাদেশকে ১৫ শতাংশেরও বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে তাদের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে