জিয়া স্মৃতি জাদুঘর হবে পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম

সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ মে, ২০২৫ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

তিন দশক পর নগরের কাজীর দেউড়ি সংলগ্ন চট্টগ্রামের প্রথম সার্কিট হাউজে অবস্থিত জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মিউজিয়ামটিতে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ জীবনীর পাশপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় উনি কী কী উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন তা তুলে ধরা হবে।

গতকাল সোমবার জাদুঘরটি পরিদর্শন শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জিয়া স্মৃতি জাদুঘর দীর্ঘদিন ধরে ছিল অবহেলিত। এ জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২০২১ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন তৎকালীন মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরবর্তীতে কালো কালি দিয়ে জাদুঘরের নামফলক থেকে জিয়ার নাম মুছে দেয়ার ঘটনা ঘটে। তখন এর প্রতিবাদ জানায় বিএনপি।

অবশেষে হবে পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম :

গতকাল সোমবার দুপুরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিদর্শন করেন জিয়া স্মৃতি জাদুঘর। এসময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এসময় তিনি বলেন, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর আমরা পরিদর্শন করেছি। এটা গত ১৫১৬ বছর অলমোস্ট ইনঅ্যাক্টিভ ছিল। এটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই একটা প্রতিষ্ঠান। ফলে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ জন্য মাস তিনেক আগে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা ইর্ন্টানাল সভা করেছি। সেই মিটিংয়ে প্রথম কাজটা আমরা করেছি, এটার যে বরাদ্দ ছিল সেটা আমরা দ্বিগুণ করেছি। এবার এখানে এসে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের পর আমরা সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, শুধু বরাদ্দ বাড়ানোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়ামে রূপান্তর করা। সেটা করার জন্য দরকার হচ্ছে প্রপার কিউরেটর, যারা বিষয়গুলো জানবেন।

উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু চট্টগ্রামের বিষয় নয়, জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ জীবন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শুরু করে উনার পূর্ণাঙ্গ জীবনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় উনি কী কী সিগনিফিকেন্ট কাজ করেছেন, সবগুলো জিনিস যেন আসে। এ জিনিগুলো কীভাবে প্রপারলি অডিয়েন্সের কাছে রিপ্রেজেন্ট করা যায়, এজন্য একটা কিউরেটর টিম লাগবে, সেই টিমটা আমরা তৈরি করছি। তিনি বলেন, কিউরেটর টিমকে হেল্প করার জন্য একটা রিচার্স টিম প্রয়োজন, যারা জিয়াউর রহমানের ওপর রিচার্স করে জানাবে কী কী হাইলাইট হবে এবং পয়েন্টগুলো কী কী। এটা আশা করি আমরা মাসখানেকের মধ্যে করতে পারব। তারপর আমরা মিউজিয়ামের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করব। কতদিন লাগবে সেটা আমি এই মুহূর্তে প্রেডিক্ট করা মুশকিল। তবে কাজটা আমরা হাতে নিয়েছি এবং কাজটা আমরা শুরু করব।

এর আগে পরিদর্শনকালে চট্টগ্রাম জেলা ফরিদা খানম সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর নিয়ে মেগা প্ল্যান করা হবে। এটা সংস্কারের জন্য আমরা কাজ হাতে নিব। বিভিন্ন সেগমেন্ট ওয়াইজ সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দপত্র হাতে পেলে বিভিন্ন কোম্পানি কাজ শুরু করবে।

নাম পরিবর্তনের চেষ্টা :

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, দেশিবিদেশি ষড়যন্ত্রে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে শাহাদাত বরণ করেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এই সার্কিট হাউজে তার রক্ত মিশে আছে। সার্কিট হাউজ শহীদ জিয়ার স্মৃতি বিজড়িত স্থান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন সার্কিট হাউজে স্থাপিত জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বন্ধ করে রেখেছিল। জাদুঘর থেকে তার নাম মুছে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সবার কাছ থেকে জিয়াকে আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। কারণ শহীদ জিয়ার নাম বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। জিয়ার নাম লেখা যায়, মুছা যায় না। শহীদ জিয়া আমাদের আবেগের জায়গা।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ করার প্রস্তাব দেন। পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরাম’ ব্যানারে নওফেলের অনুসারি ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) কর্মীরা জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন শেষে জাদুঘরের নামফলক থেকে জিয়ার নামটি মুছে দেয়া হয়।

এরপর একই বছরের ২৮ মে তৎকালীন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম বদলে ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ করার দাবি জানান। পরদিন (২৯) মে এক অনুষ্ঠানে নগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক ও বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নওফেলের দাবির বিরোধিতা করে বলেন, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর থাকবে। এরপর ৩১ মে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরাম’ ব্যানারে আবারও নওফেলের অনুসারি ছাত্রলীগ কর্মীরা জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন শেষে তারা জাদুঘরের গেটে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ লেখা একটি ব্যানার লাগিয়ে দেয়।

জাদুঘরটির বয়স ৩২ বছর :

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে সার্কট হাউজে অবস্থানকালে একদল সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ওয়েবসাইটে জিয়া বলা আছে, স্মৃতি জাদুঘর বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পুরনো সার্কিট হাউস বিল্ডিংয়ে অবস্থিত। যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সুন্দর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলি উপস্থাপন করে। ভবনটি ১৯১৩ সালে একটি ছোট পাহাড়ে নির্মিত হয়েছিল। এই স্মারক জাদুঘরটিতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। এটি ১২ গ্যালারি নিয়ে ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজব্বারের বলীখেলা ও সাম্পান বাইচে যুক্ত হবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি ও আ. লীগ নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা