প্রাকৃতিক সৌন্দযের লীলাভূমি আনোয়ারা। সমুদ্র–সংলগ্ন জনপদ হওয়ার কারণে প্রাচীনকাল থেকেই আনোয়ারার মানুষ বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। আনোয়ারায় শিল্পবান্ধব নগরী করার জন্য দেশি বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ সহকারে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য আনাগোনা করে থাকে। কর্ণফুলী তলদেশ দিয়ে টানেল স্থাপনের কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি এখন আনোয়ারার দিকে। কর্ণফুলী টানেলের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিনিয়োগের স্বর্ণদুয়ার খোলে গেছে। এই টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে দুই শহরকে এক করা গেলে, চীনের সাংহাইয়ের মত হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। আগামী দিনের সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়িয়েছে। আনোয়ারা থানা সদরে প্রায় ৪০০ একর জমিতে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান সাদ মুছা গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে চার লেনের রাস্তা আনোয়ারা দিয়ে কক্সবাজারের ছোফলদণ্ডী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আনোয়ারার জনপদের সাথে প্রাচীন বন্দরের যোগসূত্র গাঁথা আছে। তৎযুগের বণিকদের দৃষ্টি ছিল আনোয়ারা বন্দরের দিকে। বিদেশী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে আনোয়ারা বন্দর গ্রাম দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর পরও আলোর মুখ দেখিনি। বর্তমানে আনোয়ারা হাতছানি দিয়ে ডাকছে বিভিন্ন শিল্পবান্ধব ব্যবসায়ীদেরকে, যার কারণে আগামীতে আনোয়ারায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতে পারে।
বর্তমানে আনোয়ারায় সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি ১ ও ২, বেসরকারি সাদ–মুছা শিল্পগোষ্ঠী, কোরিয়ান ইপিজেড, প্রস্তাবিত চীনা ইকোনমিক জোন, জাপানীজ প্রকল্প, মেরিন একাডেমির মত সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান চালু আছে। আনোয়ারার উত্তরে কর্ণফুলী নদীর সংযোগে শিকলবাহা খাল, দক্ষিণে সাংগু নদী, পূর্বে চানখালী নদী, পশ্চিমে বঙ্গপোসাগর, মাঝখানে সাংগু নদী ও শিকলবাহার সংযোগ খাল বরুমছাড়ার ভরা শঙ্খ হতে কৈইখাইন ইছামতি খাল। দেশের বর্তমান আর্থিক, সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেয়াং পাহাড়, সুরুতবিবি জামে মসজিদ, মলকাবানু–মনুমিয়ার দিঘি, শাহ্ মোহছেন আউলিয়া, শাহ্ আলী–রজা প্রকাশ কানু শাহ্, হাজী দৌলত, হযরত আহমদ হোছেন শাহের স্মৃতি বিজড়িত আনোয়ারায় অবিস্মরণীয় সম্ভাবনার স্বর্ণদুয়ার খুলে যাবে আগামী দিনে। চট্টগ্রাম শহরের প্রথম নির্বাচিত পৌরসভার চেয়ারম্যান (বর্তমানে মেয়র) খান বাহাদুর আবদুস ছত্তার, যার নামে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আবদু ছত্তার মিলয়াতন নামে আন্দরকিল্লায় একটি হল আছে। রহমত গঞ্জে কে.বি আবদুস ছত্তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে, ওনার বাড়ি ভিংরোল গ্রামে ছত্তার হাট নামে একটি বাজারও আছে। চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ও আর নিজামের নামে একটি সড়ক আছে উনি চট্টগ্রাম পৌরসভার এককালীন ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, তার বাড়ি তৈলারদ্বীপে। চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে কে.বি ফজলুল কাদের সড়কটি আনোয়ারা গহিরার খান বাহাদুর ফজলুল কাদেরের নামে। ফিরিঙ্গি বাজারে ডা: জাকির হোসেনের নামে একটি হোমিপ্যাথিক কলেজ আছে, যার বাড়ি ভিংরোল গ্রামে। রেয়াজউদ্দিন বাজারের চৈতন্য গলির চৈতন্য শীলের বাড়ি আমাদের আনোয়ারার মালঘর গ্রামে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের চন্দনপুরায় পেচু মিয়া গলিটি তৈলারদ্বীপের ক্যাপ্টেন এয়ার আলী খানের নামে। আনোয়ারার বিশিষ্ট জনের নামে অনেক স্মৃতি চট্টগ্রাম শহরে শোভা পাচ্ছে। পরৈকোড়ায় আছে উপ মহাদেশের প্রখ্যাত জমিদার যোগিস চন্দ্র রায় ও প্রসন্ন কুমার রায়ের বাড়ি, আরও শোভা পাচ্ছে পারকি বীচ, গহিরা বাতিঘর, কোষ্টগার্ড অফিস, বন্দর বধ্যভূমি বিমান বাহিনীর রাবার স্টেশন, পুরাতন আবহাওয়া অফিস, হাইড্রোলিক এলিভেটর রবার ড্যাম আনোয়ারাকে আলোকিত করে তুলেছে।