নিষেধাজ্ঞার ৩৩ দিন পার, ৬৩ হাজার জেলে এখনো পাননি চাল

কক্সবাজারে বরাদ্দের চাল আটকে আছে গুদামে

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | রবিবার , ১৮ মে, ২০২৫ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার ৩৩ দিন অতিবাহিত হলেও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার ৬৩ হাজার ১৯৩ জন নিবন্ধিত জেলে এখনো ভিজিএফের খাদ্য সহায়তার চাল পাননি। এই বিলম্বের কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রথমে মৎস্য অধিদপ্তর বিলম্ব করেছে। আর এখন জেলেদের প্রত্যাশিত এই চাল আটকে আছে খাদ্য গুদামে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, এবারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞাতে (১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত) জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলেকে দুই ধাপে ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণের কথা। প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি। জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এতে তাদের আয়উপার্জন বন্ধ। মোটামুটি ভরসা ছিল সরকারি বরাদ্দের চাল। কিন্তু ৩৩ দিন পার হলেও এখনো মিলেনি সেই কাঙ্ক্ষিত সরকারি চাল। এতে অধিকাংশ জেলে পরিবারের সদস্যরা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ, অসুস্থ লোকজন বেশি সমস্যায় আছেন। জানা গেছে, সরকারি বরাদ্দের চাল পাননি টেকনাফ উপকূলের অন্তত ১২ হাজার জেলে পরিবার।

শাহপরীর দ্বীপের ট্রলার মালিক আবদুল আমিন ও স্থানীয় সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান জানান, দীর্ঘ সময় মাছ ধরতে না পেরে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরও সরকারি বরাদ্দের চাল না পেয়ে উপজেলার অন্তত ১২ হাজার জেলে দিশেহারা। এখন অনেক পরিবার অনাহারেঅর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছে। মহেশখালীর জেলেপল্লী অধ্যুষিত কুতুবজুম ইউনিয়নের জেলে আবুল কাসেম জানান, আমরা এখনো সরকারি বরাদ্দের চাল পাইনি। ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান বরাদ্দের চাল আসেনি।

একই কথা জানিয়েছেন উপজেলার হোয়ানক, মাতারবাড়ী, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, গোরকঘাটা, শাপলাপুর ইউনিয়নের শত শত জেলে। তারাও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, মহেশখালীতে জেলে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এর মধ্যে মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৩২ জন। কুতুবদিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায়ও নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি। কেউ সরকারি বরাদ্দের চাল পাননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলেরা জানান, অতীতে নিষেধাজ্ঞা শুরুর দুই সপ্তাহের মাথায় বরাদ্দের চাল পাওয়া যেত। কিন্তু চলতি বছর এক মাস হলেও বরাদ্দের চালের খবর নেই। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কঙবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলার ছোটবড় ছয় হাজার ট্রলারে জেলে শ্রমিক রয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজারের মতো। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগের তিন মাস প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈরী পরিবেশের কারণে ৯০ শতাংশ জেলে সাগরে মাছ ধরতে পারেননি। নিষেধাজ্ঞার ৩৩ দিন পার হলেও জেলেরা চাল হাতে পাননি। আগামী ১২ জুন সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। এই কঠিন সময়ে চাল না পেলে মানুষকে কেমন করে বেঁচে থাকবে?

এ ব্যাপারে কঙবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুজয় পাল বলেন, এবার জেলেদের চাল বরাদ্দ পেতে একটু দেরি হয়েছে। গত সপ্তাহে বরাদ্দ আসার সাথে সাথে স্ব স্ব উপজেলার ইউএনওদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউএনওরা বিতরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠাবেন। চেয়ারম্যানরা ইউপি সদস্যদের সাথে নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিতরণ করবেন।

কঙবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। গত বুধবার ইউএনওরা চেয়ারম্যানদের নামে বরাদ্দ ছাড় দিয়েছেন। এরপর আরো কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করে শিগগিরই বিতরণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারা ঘিরে বিনিয়োগের নতুন পরিকল্পনা
পরবর্তী নিবন্ধহত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে সাবেক এমপি জেবুন্নেছা