রাঙ্গুনিয়া ও তিন পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের অন্যতম মিলনস্থল চন্দ্রঘোনা লিচু বাগান। উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র লিচু বাগান সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান কাদাপানির সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ও মাটি মিশে কাদায় একাকার হয়ে যায় বাজারের অলিগলি। এতে বিপাকে পড়েন বাজারে আসা শত শত মানুষ। গতকাল শনিবার রাতে সামান্য বৃষ্টি হয়, আর এতেই হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যায় লিচু বাগানের গলি।
অথচ কিছুদিন আগেও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সহায়তায় কয়েকবার ড্রেন পরিষ্কার করেন। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকার মানুষ লিচু বাগানে অবস্থিত দ্যা রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুলের মুখ থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করে কর্ণফুলী নদীতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ড্রেন খনন ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট আবেদন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ড্রেনে জমে থাকা ময়লা আবর্জনার দূষিত পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে দূর–দূরান্তেও। এত বছরেও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্কুল–মাদ্রাসায় আসা শিক্ষার্থী ও বাজারের ক্রেতা–বিক্রেতাসহ এলাকাবাসী। এই সমস্যা নিরসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছে চন্দ্রঘোনা দ্যা রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুলের পরিচালনা কমিটি। বাজারের ব্যবসায়ীরাও একই আবেদন করলে প্রশাসন ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছেন বলে জানান।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র লিচু বাগানে দেশের প্রায় জেলার মানুষ আসে নানা ব্যবসা–বাণিজ্য ও কর্মের সন্ধানে। সকাল হলেই শত শত নারী পুরুষের পদচারনায় লিচু বাগান ব্যস্ততম এলাকায় পরিণত হয়। লিচু বাগানের নিম্ন এলাকা দ্যা রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুলের পাশ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনটি বছরের পর বছর ময়লা আবর্জনা প্লাস্টিক ও নানা জলকাদায় পরিপূর্ণ। এতে পানি ও ময়লা আবর্জনা চলাচল করতে পারছে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংকুচিত করে এবং সোজা ড্রেনেজকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে স্থাপনা করায় পানি অপসারণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দোকান মালিক, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষের হাঁটু সমান ময়লা পানি ডিঙিয়ে আসা–যাওয়া করতে হয়। এবং এতে লিচু বাগানের ব্যবসায়ীদের বেচা–বিক্রিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
চন্দ্রঘোনা দ্যা রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন রোকন জানান, এখনো বর্ষা আসেনি। এর আগেই সামান্য বৃষ্টিতেই এখন হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে এখানকার ব্যবসায়ী, ক্রেতা–বিক্রেতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং নানা স্থাপনার মালিক ও জনসাধারণের চলাচলের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের রোগ। তবে স্কুলের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে এবং প্রকল্প গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। ইউএনও নিজে বিষয়টি সরেজমিনে এসে দেখে গেছেন বলে তিনি জানান।
বাজারে আসা রহিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, বাণ্যিজিক এলাকা লিচু বাগানে প্রতিদিন শত শত নারী–পুরুষ তাদের পছন্দের কেনা–কাটা করতে আসে। দেশের প্রায় জেলার মানুষ এখানে আসে ব্যবসা বাণিজ্য করতে। জলকাদার বিষয়ে স্থায়ী নিরসনে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদেরও দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, আমি লিচু বাগানের জলাবদ্ধতার করুণ চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে বিষয়টি সরেজমিনে দেখে এসেছি। প্রাথমিকভাবে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া হবে।
ড্রেনে ময়লা–আবর্জনা না ফেলতে এবং কেউ যাতে দখল করতে না পারেন সেজন্য এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান ইউএনও।