আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসররা বিএনপির সদস্য হতে পারবে না

সদস্য ফরম বিতরণ ও নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধনে খসরু এ মেম্বারশিপ দিনের আলোতে করতে হবে, অন্ধকারে নয়

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ মে, ২০২৫ at ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসররা বিএনপির সদস্য হতে পারবে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, একজন ভালো লোক, সে হয়তো আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর না, হয়তো আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতেও পারে, আমরা জানি না। সে কাকে ভোট দিয়েছেন তাও জানি না। কিন্তু সমাজে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, সমাজে কখনো রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করেনি। বিএনপির কার্যক্রমকে প্রতিহত ও বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেননি। বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি করেনি, পারলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইনডাইরেক্টলি (পরোক্ষভাবে) সহযোগিতা করেছে। তাদের সদস্য হতে কোনো বাধা নেই। এই জায়গায় খুব সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের মাঠে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আমীর খসরু নিজের সদস্য ফরম পূরণ করে নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সদস্য ফরমের বই বিতরণ করেন।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও সদস্য ফরম নবায়ন কমিটির সদস্য সচিব এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ হারুন প্রমুখ। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম সভাপতিত্ব করেন। সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সঞ্চালনা করেন।

খসরু বলেন, নবায়নে কোনো সমস্যা নেই। কারা বিএনপির নতুন মেম্বার হতে যাচ্ছেন এটার একটা ক্রাইটেরিয়া (মানদণ্ড) আছে। এটার একটি দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ সমাজে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত, যারা সমাজে অসামাজিক কাজে লিপ্ত, যাদের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই, এসব লোকদের যথাসম্ভব বাইরে রাখার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, রাজনীতির বাইরে সামাজিকভাবে প্রতিটি এলাকায় কিছু চিহ্নিত লোক থাকে। যারা আমাদের সাথে থাকলে ভোট কমে যাবে, বাড়বে না। যাদের চেহারা দেখলে মানুষ সরে যায়, মানুষ ভুল ধারণা পোষণ করবেন, এদের দূরে রাখবেন।

এ সময় বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে ‘আন্দোলন’ হিসেবে অবিহিত করেন খসরু। বলেন, এটা শুধু মেম্বারশিপ না, এটা একটা আন্দোলন। আন্দোলন মানে শুধু রাস্তায় মিছিলমিটিং ও জিন্দাবাদ বলা না। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে আমাদের কাজের অংশ হিসেবে মেম্বারশিপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা চেষ্টা করব বৃহত্তর অংশকে আমাদের মেম্বারশিপের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। কারণ এটা দেশের বৃহত্তর দল, তাই দেশের বৃহত্তর অংশ যাতে বিএনপির সদস্য হয়। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, এটাই বিএনপির ভবিষ্যৎ। এটা শুধু বিএনপির সদস্য নবায়ন নয়, বিএনপির নতুন একটা শুরু। এখান থেকে আমাদের নতুন যাত্রা। এ যাত্রা আমাদের সফল করতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে, একসাথে কাজ করতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, বিগত ১৫ বছর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। কারো বাড়িতেও যদি কোনো একটা অনুষ্ঠান বা আলোচনা ও সভা হতে যাচ্ছে সেখানেও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন উপস্থিত হতো। আর বাইরে সাংগঠনিক কার্যক্রম অসম্ভব বললে ভুল হবে না। দীর্ঘ ১৫১৬ বছর বিএনপির মতো একটা বৃহৎ ও বিশাল দল রাজননৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সঠিকভাবে দলের যে কার্যক্রমগুলো করার কথা ছিল সেগুলো আমরা করতে পারিনি।

তিনি বলেন, বাধা উপেক্ষা করে অনেক কিছু করেছি। বাধা উপেক্ষা করে সংযোগ করেছি, রাস্তায় নেমেছি। জেলে গেছি। মৃত্যুবরণ করেছে। পুলিশের হেফাজতে ও জেলখানায় চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। ৬০৭০ লক্ষ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে। পালিয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম, বড় বড় যেগুলো করার কথা ছিল সেগুলো আমরা করতে পারিনি।

খসরু বলেন, আজকে আমাদের সামনে একটা বিশাল সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বৃহত্তম দল। এটাকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে তার শক্তিশালী অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দল শক্তিশালী আছে, দল শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করেছে, সব ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের সাংগঠনিকভাবে যে স্পিরিট, যে শক্তি, যেটার ওপর আমরা ভিত্তি করব, সেটা এখন আমাদেরকে করতে হবে। তার জন্যই আজকের এই উদ্যোগ।

তিনি বলেন, গতবার মেম্বারশিপের জন্য যারা বই নিয়ে গেছে তারা ওই বই নিয়ে বের হতে পারেনি। তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন প্রেক্ষাপট। আজকে যে প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তভাবে তাদের দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে সক্ষম। সুতরাং এই নবায়ন কার্যক্রম, এই নতুন মেম্বারশিপের যে কার্যক্রম সেটা আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, এ মেম্বারশিপ দিনের আলোতে করতে হবে, অন্ধকারে নয়। দিনের আলোতে আজকে যেভাবে আমরা এখানে করছি, আপনারাও প্রতিটি শহর, থানা ও ইউনিয়নে এভাবে মেম্বার করবেন। যারা বিএনপির সদস্য হতে চায়, তারা বীরদর্পে এসে মেম্বার হোক। এখানে কোনো লুকোচুরি নেই। বিএনপির সদস্য হওয়া গর্বের। সুতরাং দিনের আলোতে করবেন। তাহলে সবাই দেখতে পাবে। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা চাঙ্গা হবে। তারাও দেখবে, এই সুযোগ আমাদের গত ১০১৫ বছর ছিল না। এখন এই সুযোগ আমাদের সামনে আছে, এটা তো আমাদের পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, একদিকে পুরুষের লাইন থাকবে, আরেক দিকে মহিলার লাইন থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে ভোটার হয় সেভাবে হবে। এটা দৃশ্যমান হতে হবে, এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে হবে। রাষ্ট্রের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে দিতে হবে।

খসরু বলেন, এখন শেখ হাসিনা বিতাড়িত। আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষের মনে নতুন স্বপ্ন, দেশ গড়ার স্বপ্ন। মানুষ কি চাচ্ছে এখন? নতুন প্রজন্ম চাচ্ছে, দেশটা গড়তে হবে। দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, যে পরিবেশে দেশের সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারবে। দেশে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থাকতে হবে, যে ব্যবস্থায় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ অংশ নিতে পারবে।

তিনি বলেন, বিএনপির নতুন স্লোগান হচ্ছে, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে গণতন্ত্রায়ন করা। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও দেশের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা আগামী দিনে আমরা করে দিব। ইংরেজিতে বলে, ডেমোক্রেটাইজেশন অফ ইকোনমি, অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়ন করা। মেম্বারশিপের সাথে সাথে বলবেন, রাজনীতির গণতন্ত্র, অর্থনীতির গণতন্ত্র এবং এই গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।

খসরু বলেন, আজকে যারা এসেছেন, আপনারা হচ্ছেন প্রত্যেকটি এলাকার নোঙর। মানে যেভাবে নোঙর জাহাজ ধরে রাখে। আপনারা বিএনপির জাহাজটাকে ধরে রাখবেন। তাই আপনাদেরকে কাজটা সঠিকভাবে করতে হবে। এটার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতি, এগিয়ে যাওয়া, নির্বাচন, বাংলাদেশ গড়া। এটা অনেক বড় দায়িত্ব কিন্তু। সকলে কষ্ট করে এ দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করবেন।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, সদস্য সংগ্রহ ও ফরম বিতরণ দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দেশে একচেটিয়া, দমনমূলক ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল। এই সময়ে জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরা স্বাধীনভাবে এমন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেননি, বাস্তবায়ন তো দূরের কথা। আজ আমরা নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। একটি মুক্ত, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের যাত্রা আবার শুরু হয়েছে। তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশবাসী আজ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমরা একটা নতুন যুগে বসবাস করছি। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আইটি লাইনে খুব দক্ষ। এই প্রজন্মটা কিন্তু দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি। তাই নবীন ও প্রবীণের মধ্যে একটা সমন্বয় করা দরকার। সেজন্য আমরা এই কর্মসূচিকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনে যারা প্রতিযোগিতায় আসতে চায়, তারা বিএনপির সঙ্গে পারবে না। বিএনপি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দল। কোনো ষড়যন্ত্র দলের অগ্রযাত্রার পথে বাধা হতে পারবে না।

এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, আমাদের অনেক নেতাকর্মী দলের সদস্য ফরম পূরণ করে নিবন্ধিত হতে পারেনি। আমরা যারা পুরনো সদস্য রয়েছি তারা নবায়ন করব। নতুন সদস্যরা ফরম পূরণ করবেন। আমাদেরকে যারা মন থেকে অন্তর দিয়ে সমর্থন করে তাদের জন্য একটি অঙ্গীকারনামা এখানে রয়েছে। তারা বিশ টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপ করবে এবং এই ফর্মের মাধ্যমে তিনি একজন সদস্য বলে গণ্য হবেন। আমরা যারা এখনো নবায়ন করিনি এই নবায়নগুলি আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী এবং জনসাধারণকেও এই ফরম পূরণ করাতে হবে।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচি চট্টগ্রাম মহানগরসহ দশটি জেলায় অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্র থেকে ফরমের বই সংগ্রহ করে প্রতিটি জেলা উপজেলা থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা করে নবায়ন করতে হবে। তবে পতিত স্বৈরাচারের কোনো দোসরকে সদস্য করা যাবে না। যদি কেউ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তরিকুল আলম তেনজিং। উপস্থিত ছিলেন কঙবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, বান্দরবান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাচিং প্রু জেরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দিন সাবু, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ আজাদ, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দীন আলাল, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবসার, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এড. এবিএম জাকারিয়া প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক কাউন্সিলর তৌফিক ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমাটির নিচে লুটের টাকা