কর্ণফুলীর মাঝখানে ইকো-ফ্রেন্ডলি জোন করতে চাই : মেয়র

১৫ তম আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা- চিটাগং ট্রাভেল মার্ট উদ্বোধন ।। আসকারদীঘি ও আগ্রাবাদ ডেবার পাড়ে ওয়াকওয়ে নিয়েও আলোচনা ।। সঠিকভাবে তুলে ধরা গেলে চট্টগ্রাম হবে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থান : আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ মে, ২০২৫ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেছেন, পর্যটন শিল্পকে আমরা কেন যেন অবহেলা করি। একমাত্র আমরাই জিডিপিতে এগ্রিকালচার, মানবসম্পদ, গার্মেন্টস সেক্টরের পরের সেক্টর হিসেবে পর্যটনকে আনতে পারিনি। আমাদের যে কাঠামো সেখান থেকে আমরা বের হতে পারিনি। পর্যটন মিনিস্ট্রিকে আমরা আলাদা করতে পারিনি। যেদিন আমরা পর্যটনকে আলাদা মিনিস্ট্রি করতে পারব সেদিন পর্যটন শিল্প দাঁড়িয়ে যাবে। আমি দেখেছি যে, মন্ত্রীরা কেন জানি সিভিল এভিয়েশনের দিকে একটু ইন্টারেস্ট অনুভব করতেন। ট্যুরিজমটাকে পাত্তা দিতে চাইতেন না। আমাদের এখানে পর্যটন শিল্প উঠে না আসার এটাই মূল কারণ। অন্যদিকে আমাদের চারপাশের রাষ্ট্রগুলো পর্যটন শিল্পকে পুঁজি করেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। গতকাল নগরীর পেনিনসুলা হোটেলে ১৫ তম আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলাচিটাগং ট্রাভেল মার্ট ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাৎ হোসেন এ কথা বলেন।

তিনদিন ব্যাপী এ পর্যটন মেলাচিটাগং ট্রাভেল মার্ট ২০২৫ এর আয়োজক ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা বাংলাদেশ মনিটর এবং পার্টনার হিসেবে সহযোগিতায় আছে ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্স এবং অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বাইটিকিটস। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক।

অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম, চট্টগ্রাম ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার উত্তম প্রাসাদ পাঠক ও ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম।

মেয়র বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চট্টগ্রামকে সবকিছু দিয়েছেন। একদিকে পাহাড়, একদিকে সমুদ্র, একদিকে নদী। চট্টগ্রামের মানুষের মনও অনেক বড়, অতিথিপরায়ণ। সবমিলে চট্টগ্রাম অনেক সমৃদ্ধশালী। আমাদের এখানে রাঙামাটি আছে, বান্দরবান আছে, এখানে খাগড়াছড়ি আছে, কক্সবাজার আছে। আমরা ভাগ্যবান। কিন্তু আমরা এসবকে পুঁজি করতে পারছি না। তিনি বলেন, আমাদের পতেঙ্গায় একসময় মেয়েদের কোনো বাথরুম ছিল না। সেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশকে যুক্ত করা হয়নি। আমরা এখন ট্যুরিস্ট পুলিশকে সেখানে যুক্ত করেছি। ট্যুরিস্ট পুলিশকে যদি আমরা যুক্ত করতে না পারি তাহলে পর্যটন এগুবে না। সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে, ট্যুরিস্টকে নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট হিসেবে ঘোষণা করার পর আবার সেটা উথড্র করা হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে অবশ্যই চট্টগ্রাম বিমান বন্দরকে স্টাবলিশ করতে হবে। সেটি করার জন্য অবশ্যই অবকাঠামো উন্নত করতে হবে। পুরো কর্ণফুলী নদীর আশপাশটাকে একটা পর্যটন টাউন হিসেবে ঘোষণা করতে চান উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছিও। কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে ৫০০ একরের মতো জায়গা আছে যেটি আমি জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়েছি। ইতিমধ্যে আমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি। জায়গাটিকে আমরা একটা ইকোফ্রেন্ডলি জোন হিসেবে ঘোষণা করতে চাই। সেখানে সবকিছু থাকবে। তিনি বলেন, নগরীর আসকারদীঘির পাড়টাকে ঢেকে দিয়েছে কতগুলো ফার্নিচারের দোকান। সেগুলোকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে যদি আমরা একটা ওয়াকওয়ে করে দিতে পারি, রাতে যদি সেখানে লাইট জ্বলে, সবাই হাঁটে, এটা একটা দৃষ্টিনন্দন জায়গায় পরিণত হবে। আমি এটা নিয়ে চিন্তা করছি। অবশ্যই সেটি আমি করে যাব।

আগ্রাবাদের ডেবার পাড় বিষয়ে মেয়র বলেন, কতবড় একটা ডেবার পাড়। অথচ সেটাকে আমরা ইউটিলাইজ করতে পারছি না। ইতিমধ্যে আমি বন্দরের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি, রেলওয়ের সাথে কথা বলেছি, এখন সবাই পজিটিভ। ডেবারপাড়টাকেও আমরা ওয়াকওয়ে করে দেব। আমাদের লালদীঘিতে আগে থেকেই ওয়াকওয়ে রয়েছে। এসব যদি আমরা করে দিতে পারি, মানুষ কিছুটা হলেও শ্বাস নিতে পারবে। আমরা ইতিমধ্যে কিছু পার্ক করে দিয়েছি। বিপ্লব উদ্যানে আমরা একটা গ্রিন পার্ক করছি। আমবাগানে ওয়াসিম আকরাম পার্ক করছি। আগ্রাবাদের শিশু পার্কটিতে আমরা নতুন করে শুরু করছি। আমরা কিছু মাঠ করে দিচ্ছি। জাম্বুরী মাঠ বিষয়ে আমরা একটি কমার্সিয়াল ব্যাংককে ইনভাইট করেছি। তাদেরকে বলেছি, দৃষ্টিনন্দন একটা খেলার মাঠ, সেখানে ওয়াকওয়ে থাকবে, মাঝেমধ্যে যদি কনসার্টও হয় সেটিও যাতে আয়োজন করা যায়, সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। ৪১ টা ওয়ার্ডে খেলার মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর ইতিমধ্যে করে ফেলেছি। সিআরবির যে মাঠটি আছে সেটিকে দৃষ্টিনন্দন মাঠ করা হবে। রেলওয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। দেশটাকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। আমার শহরটাকে ভালোবাসতে হবে। অবশ্যই আমাদের দেশ, আমাদের শহর সুন্দর সমৃদ্ধশালীতে পরিণত হবে।

দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, পর্যটন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তির শিল্প। এটি বিশ্বকে কাছাকাছি আনে। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস এখন পর্যটন। আমরা যদি জীবনকে নদীর সঙ্গে তুলনা করি নদীর সৌন্দর্য্য, বেঁচে থাকা এর প্রবাহে। তেমনি পর্যটনও আমাদের জীবনে গতির সঞ্চার করে। নতুন পথ, অপরিচিত মুখ, অজানা ভাষা, আর অচেনা সংস্কৃতি এসবের সংস্পর্শে এসে মানুষ নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারে। পৃথিবীর বিস্ময় ও বৈচিত্র্য অনুভব করতে হলে নিজস্ব সীমার বাইরে পা বাড়াতেই হয়। নিজেও ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা পর্যটন মেলা আমাদের চোখে বিশ্বকে এনে দেয়। আর আমাদের দেশকে পৌঁছে দেয় বিশ্ববাসীর চোখে। এটা এমন এক সেতুবন্ধন যেখানে দেশ বিদেশের সৌন্দর্য্য, সংস্কৃতি ও সম্ভাবনার মিলন ঘটে। এম এ মালেক বলেন, একটা সময় পর্যটন মানে ছিল অবকাশ যাপন। এখন এটি একটি বহুমাত্রিক শিল্প। প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মানুষ ভ্রমণে বের হন। যা বৈশ্বিক জিডিপির ১০ শতাংশ যোগান দেয়। বিশ্বের বহু দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি পর্যটন শিল্পের উপরই নির্ভরশীল। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভ্রমণ শুধুমাত্র বিলাসিতা নয়, বরং একটি ক্যারিয়ার অপশন। ভ্রমণ ব্লগিং, ইউটিউব কন্টেন্ট, ট্রাভেল ফটোগ্রাফি, গাইড সার্ভিস, ট্যুর অপারেটর এসব পেশা এখন অত্যন্ত লাভজনক এবং সৃজনশীল। কিন্তু এই খাতটিকে এখনো আমরা সেভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, এ রকম মেলা যত বেশি আয়োজন হবে, এ শিল্প এদেশে বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা আরো বাড়বে। এ মেলায় যে ২৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যে ৩৪টি স্টল আছে এর প্রত্যেকটিই একটি দেশ, একটি সংস্কৃতি কিংবা একটি জীবনের গল্প তুলে ধরে। এ রকম মেলা আমাদের মনে করিয়ে দেয় পৃথিবী বড়, কিন্তু মানুষের হৃদয়ের বন্ধন তার চেয়েও বড়।

এম এ মালেক বলেন, চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার কথা আমরা বহুবার শুনেছি। দীর্ঘ সময় ধরে শুনে আসছি। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। এখন সময় এসেছে এ নিয়ে নতুন করে ভাবার। নতুন করে উদ্যোগ নেয়ার। চট্টগ্রামের মত এমন একটি জায়গা আপনি পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না। চট্টগ্রাম শুধু একটি শহর নয়, এটি একটি অনুভব, একটি আবেগযেখানে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, সুন্দর প্রকৃতি এবং মানুষের সারল্য ও আতিথেয়তা একাকার হয়ে আছে। আমি বিশ্বাস করি, সঠিকভাবে চট্টগ্রামকে তুলে ধরা গেলে পর্যটন এখানকার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প হয়ে উঠবে। একই সাথে এই মেলা এখানকার লোকজনকেও ভ্রমণে বের হতে উৎসাহী করে তুলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি আরো বলেন, আগেই বলেছি আমি ঘুরতে ভালোবাসি। আমার বয়স এখন ৮৫। আমার দুটি শখের একটি কলম কেনা। আরেকটি ভ্রমণ। আল্লাহ পাকের রহমতে, বিশ্বের অনেক দেশে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। পৃথিবী বিখ্যাত অনেক পর্যটন স্পট দেখার সুযোগ

পেয়েছি। যতই ঘুরবেন আপনি বুঝতে পারবেন, বিশাল পৃথিবীতে আপনি কত ক্ষুদ্র একটি স্থান জুড়ে আছেন।

আয়োজকরা জানিয়েছে, এবারের পর্যটন মেলায় ২৭টি প্রতিষ্ঠান ৩৪টি স্টলে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশবিদেশের এয়ারলাইন, ট্যুর অপারেটর, হোটেল, রিসোর্ট, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ইমিগ্রেশন সমাধান প্রদানকারী কোম্পানিসহ বিভিন্ন পর্যটন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। মেলা চলাকালীন ভিজিটরদের হ্রাসকৃত মূল্যে এয়ারটিকিট, ট্যুর প্যাকেজ, মেডিক্যাল প্যাকেজ, হোটেল রুম ও অন্যান্য পর্যটন সেবা অফার করছে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পর্যটন মেলা ভিজিটের জন্য যে সকল দর্শনার্থী আগেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তাদের জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যায় র‌্যাফেল ড্র’র আয়োজন করা হবে। র‌্যাফেল প্রাইজের মধ্যে থাকছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে এয়ারটিকিট, হোটেল রুম, রিসোর্টে আবাসন ইত্যাদি। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আগ্রহী ভিজিটরদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে কাঠবোঝাই ট্রাক্টর উল্টে প্রাণ হারালেন ৩ শ্রমিক
পরবর্তী নিবন্ধউপদেষ্টা পরিষদে ২টি অধ্যাদেশ, ২টি নীতিমালা অনুমোদন