রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আপিলের ফল জানা যাবে আগামী ১ জুন। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে এ নিয়ে শুনানি শেষ হয়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ এই বেঞ্চ রায়ের জন্য ১ জুন দিন ঠিক করে দেয়।
গতকাল দলটির পক্ষে এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে তৌহিদুল ইসলাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে শিশির মনির বলেন, আদালতে বলেছি জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকীকরণ করা হয়েছে। যারা নিবন্ধন বাতিল করেছে তারা মূলত উচ্চ আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। এ জন্যই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। আশা করব, আমাদের যুক্তির ভিত্তিতে আগামী ১ জুন জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরে পাবে। খবর বিডিনিউজের।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাময়াতের আবেদনে সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়। এবার নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকারও ফিরে পাবে ২০০১–০৬ সময়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারে থাকা দলটি।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর জানুয়ারি মাসে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন একটি রিট আবেদন করেন। সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পর ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা–উল হকের বেঞ্চ ওই রিটের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। ওই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন ওই বছরের ৫ অগাস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। তাতে দলটির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়ায় সেই আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে। তাতে সম্মতি দিয়ে গতবছর ২৪ অগাস্ট আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। তাতে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর আইনি লড়াইয়ের পথ খোলে। জামায়াতের কৌঁসুলি শিশির মনিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত মঙ্গলবার শুনানির দিন ঠিক করে দেয়। সেদিন শুনানির পর গতকাল বুধবার এ নিয়ে আবার শুনানির তারিখ রাখা হয়েছিল। শুনানি শেষে রায়ের জন্য দিন ঠিক করেছে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ এই বেঞ্চ।
শুনানি শেষে শিশির মনির বলেন, প্রতীক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি রেজ্যুলেশন আছে। এই রেজ্যুলেশনের আলোকে নির্বাচন কমিশন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আদালতে একটি নির্দেশনা চেয়েছি। প্রতীক তো উচ্চ আদালত বরাদ্দ করতে পারেন না, বরং প্রতীক বরাদ্দের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের। তিনি বলেন, দাঁড়িপাল্লা প্রতীক জামায়াতে ইসলামী বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। সুপ্রিম কোর্টেও ১৯৭২ সাল থেকে এই প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে। সব নির্বাচনে জামায়াত এ প্রতীক নিয়ে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছে, এমনকি মন্ত্রিত্বও পেয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ কারণে শুধু নিবন্ধন নয়, প্রতীক বরাদ্দের বিষয়েও আদালতের পর্যবেক্ষণ লিখিতভাবে চাওয়া হয়েছে।