কালুরঘাটে রেল-কাম সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

ফলকে নেই কারো নাম, প্রশংসায় ভাসছেন প্রধান উপদেষ্টা এটি তৈরি হয়ে গেলে চট্টগ্রামবাসীর বহু কষ্টের অবসান হবে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৫ মে, ২০২৫ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

কালুরঘাটে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলসহ সড়ক সেতু নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে ফলকে দেওয়া হয়নি প্রধান উপদেষ্টা বা অন্য কারও নাম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারীর নাম না দিয়েই ফলক তৈরি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বিভিন্ন মহল প্রশংসা করছেন প্রধান উপদেষ্টার।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্মারকের ফলক উন্মোচন করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। এসময় তিনি বলেন, কালুরঘাট ব্রিজে আমার অনেক স্মৃতি। এই সেতুর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। আজ এখানে বোয়ালখালীর বাসিন্দাও উপস্থিত আছেন। কালুরঘাট সেতু তাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত। এটি তৈরি হয়ে গেলে চট্টগ্রামবাসীর বহু কষ্টের অবসান হবে।

এসময় রেলপথ, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন একটি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ। এখন যে সেতুটি আছে, ১৯৩১ সালে সেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যদি এর মেয়াদকাল ৮০ বছরও ধরা হয়, তবে ২০১১ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর ফলকে নেই প্রধান উপদেষ্টার নাম : চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে সকাল ১১টায় কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে ভিত্তিপ্রস্তর ফলকে দেওয়া হয়নি প্রধান উপদেষ্টার নাম। দেশের ইতিহাসে একেবারেই ব্যতিক্রম গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের বিষয়টি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারীর নাম না দিয়েই ফলক তৈরি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এটা দেশের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি নজিরবিহীন ও প্রশংসনীয় ঘটনা।

এদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর ওপর বহুল আকাঙ্ক্ষিত রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। ফলকে কারো নাম না লিখতে নির্দেশনা পেয়েছিলাম আমরা। সেভাবেই ফলকটি তৈরি করা হয়েছে। এটা দেশের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি নজিরবিহীন ও প্রশংসনীয় ঘটনা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্দেশনা মতো আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার দেশের একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কিংবা উদ্বোধনের সময় ফলকে কারো নাম রাখেনি। সর্বশেষ চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে প্রথমবারের মতো ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের সময় ফলকে কারো নাম না দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। শুধুমাত্র ‘কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ’ ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন লিখে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রেলওয়ের নাম ফলকে লিখে প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়ে ২০৩০ সালে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর কথা রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর ডিজাইন চূড়ান্ত করা হবে। সব ঠিক থাকলে ২০৩০ সালে সেতু দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড, এ হৃদপিণ্ডের চিকিৎসা দরকার
পরবর্তী নিবন্ধগ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম শাখা পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা