প্রকৃতির বুক কেটে লোভের বাণিজ্য

লোহাগাড়ায় টিলা থেকে ইটভাটায় মাটি পাচার

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১২ মে, ২০২৫ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় রাতের আঁধারে টিলা কেটে ইটভাটায় মাটি পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জান মোহাম্মদ পাড়ায় একটি প্রভাবশালী মহল এ টিলা কাটছে।

স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন যাবত জান মোহাম্মদ পাড়ার জনৈকা নুরুজ্জাহানের মালিকানাধীন জায়গার টিলা কাটছে একটি প্রভাবশালী মহল। জনৈক জামাল কোম্পানির স্কেভেটর দিয়ে টিলা কেটে পার্শ্ববর্তী তারই মালিকানাধীন এসএমবি ইটভাটায় এসব মাটি নেয়া হচ্ছে। মাটি পরিবহনে ব্যবহার করা হয় ৫/৬টি মিনি ট্রাক। দিনের বেলায় সব সুনসান থাকলেও স্কেভেটর ও ট্রাকের বিকট শব্দে স্থানীয়দের রাতের ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মাটিবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে ক্ষতি হচ্ছে গ্রামীণ সড়কের। পাহাড়খেকো চক্রটি প্রকৃতির বুক কেটে লোভের বাণিজ্য চালাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা ইউনিয়নের বহু টিলা কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। এভাবে টিলা কাটার কারণে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। টিলা কাটার কাজে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

গতকাল রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, টিলা কাটার কাজ রাতে সরব থাকলেও দিনে থাকে নীরব। টিলার উপরে একটি ভাঙা মাটির ঘর রয়েছে। পাশে রয়েছে আরো কয়েকটি বসতঘর। এভাবে টিলা কাটায় পার্শ্ববর্তী বসতঘর ধসে যাবার আশংকা রয়েছে। রাতে মাটি কাটার জন্য টিলার স্থানে রেখে দেয়া হয়েছে স্কেভেটর। পার্শ্ববর্তী এসএমবি ইটভাটায় টিলার লাল মাটির স্তুপ দেখা গেছে। এভাবে টিলা কাটায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। বর্ষায় টিলা ধসে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। টিলার মালিক নুরুজ্জাহান জানান, গত ১৫ এপ্রিল টিলার মাটি কেটে বসতঘর করার অনুমতি চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের কপি রিসিভ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসিয়াল সীল দেয়ায় তিনি মনে করেছেন অনুমতি দিয়েছেন। ইটভাটার মালিক জামাল কোম্পানি জানান, টিলার মাটি তিনি কাটছেন না। এছাড়া তার ইটভাটায় ওই টিলার মাটি আনা হচ্ছে না। আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি টিলার মাটি কেটে পার্শ্ববর্তী একটি জায়গা ভরাট করছেন। তার ইটভাটায় টিলা কাটা লাল মাটির স্তুপের ব্যাপারে জানতে চাইলে জানান, এসব মাটি অন্য জায়গা থেকে আনা হয়েছে।

পরে আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি উপস্থিত সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলতে আসেন। এক পর্যায়ে অর্থের বিনিময়ে সংবাদকর্মীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, টিলার মাটি কেটে বসতঘর নির্মাণের জন্য অনুমতি চেয়ে একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। তবে টিলার মাটি কাটার জন্য অনুমতি দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে উৎসবমুখর পরিবেশে সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে পুকুরে ডুবে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু