প্রেমের ফাঁদ, এরপর ছাদ থেকে ফেলে খুন

অভিযুক্ত দম্পতিকে গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১২ মে, ২০২৫ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

নগরের ডবলমুরিং থানাধীন পাহাড়তলী বাজার এলাকায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক ব্যক্তির সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় স্বামীস্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক দম্পতি। এরপর জানাজানির ভয়ে ওই ব্যক্তিকে দুইতলার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে তারা। ৯৯৯এ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে খুনের নেপথ্যের এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরা মূলত এরকম ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন চাকরিজীবী ও পেশাজীবীদের টার্গেট করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া। এর আগে গত শনিবার রাত ১১টার দিকে অভিযুক্ত রুনা আক্তারকে এবং গতকাল দুপুরে তার কথিত স্বামী ইব্রাহিম খলিলুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে জানা গেছে, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালসে সিনিয়র মেডিকেল প্রমোশন অফিসার হিসেবে কাজ করতেন রনজিৎ দত্ত নিলক (৫৪)। কিছুদিন আগে তার পরিচয় হয় রুনা আক্তারের (৩৫) সঙ্গে। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রুনা প্রেমের ফাঁদে ফেলে রনজিততে কব্জা করার চেষ্টা করেন। রুনার বাসায় আসাযাওয়া হতো হরদম। এর মধ্যে রুনা তার কথিত স্বামী ইব্রাহিমকে (৫০) নিয়ে রনজিতের সর্বস্ব হাতানোর পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষে পুলিশে জানাজানির ভয় তাদের মধ্যে চেপে বসে। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে রনজিতকে তারা ফেলে দেন দুইতল ভবনের ছাদ থেকে। পুলিশ কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া বলেন, মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার পরে রনজিতের মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভবনের দুই তলা থেকে একই ভবনের একতলার ছাদে অবচেতন অবস্থায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার রুনা আক্তার সীতাকুণ্ড থানার মধ্যম সেলিমপুর গোলাম রহমান চৌধুরী বাড়ির মৃত মোস্তফা সওদাগরের মেয়ে এবং ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ প্রকাশ মিজান ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সোনাপুর গ্রামের আমিরাবাদ এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। তারা দুজনেই নগরের পাহাড়তলী বাজার এলাকায় স্বামীস্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ভুক্তভোগী রনজিৎ দত্ত নিলকের বাড়ি পটিয়ার মোজাফফরাবাদ এলাকায়। নগরের পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী এলাকায় তিনি স্ত্রীপরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একজন পথচারী ৯৯৯এ ফোন করে ডবলমুরিং থানা পুলিশকে জানায়, পাহাড়তলী বাজার এলাকার ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সংলগ্ন সুলতান ভবনের ছাদে অজ্ঞাত এক পুরুষের মরদেহ পড়ে আছে। পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে এবং পরিচয় শনাক্তে বিভিন্ন থানায় ছবিসহ বেতার বার্তা পাঠায়। একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রনজিৎ দত্তের স্ত্রী শিপ্রা মজুমদার স্বামীর খোঁজ না পেয়ে পাহাড়তলী ও আকবর শাহ থানায় যোগাযোগ করে সবশেষ ডবলমুরিং থানায় এসে তার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে তিনি অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগীর স্ত্রীর বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ভিকটিম বাসা থেকে বের হন। রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের যোগাযোগ হয়। এরই মধ্যে স্বামীর খোঁজে তিনি আকবর শাহ এবং পাহাড়তলী থানায় যান। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে ডবলমুরিং থানায় গিয়ে লাশটি শনাক্ত করেন ভিকটিমের স্ত্রী। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় তিনি একটি হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা হোসাইন কবির বলেন, আমাদের একটি চৌকস টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটনে সমর্থ হয়। আমরা ৮ ঘণ্টার মধ্যেই এই কাজটি করি। সেই সাথে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুজনকে শনাক্ত করি। রাত ১২টার দিকে রুনা আক্তারকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে অপর সহযোগী ইব্রাহিমের তথ্য দেয়। পরে আজ (রোববার) তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করি। ইব্রাহিম খলিলের দেখানো মতে আমরা ভিকটিমের মোবাইল, স্যান্ডেল ইত্যাদি উদ্ধার করেছি। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যতটুকু জেনেছি, চক্রটি চাকরিজীবী, পেশাজীবীবিত্তবান লোকদের টার্গেট করে। এরপর ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। এরা আরও কতজনকে ফাঁদে ফেলেছে তা আমরা জিজ্ঞাসবাদে জানতে পারবো। রুনা আক্তারের পেশাই মূলত প্রেমের ভান করে ফাঁদে ফেলা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে যে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রুনা আক্তারকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আরেক আসামিকে আমরা সোমবার (আজ) আদালতে পাঠাবো। যেহেতু এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তাই আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৫ বছরের বরাদ্দ থেকে সরে আসার ইঙ্গিত বাফুফের
পরবর্তী নিবন্ধমানুষ একটা স্থিতিশীল বাংলাদেশ চায়