‘মা’ আর ‘মায়া’ শব্দ দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে, মায়ের চেয়ে বেশি স্নেহ, মায়া ও মমতা দিতে পারে। যেকোনো সংসারে একজন মা যে আত্মত্যাগ করেন তার কোনো তুলনা হয় না। মায়েরা সংসারে শুধু দিয়ে যান নিঃস্বার্থভাবে। কত মা যে সংসারে লক্ষ্মী হতে গিয়ে অন্তর্নিহিত সরস্বতীকে বিসর্জন দিয়েছেন তার কোনো হিসেব নেই। শুনেছি আমার মা‘ও ছোটবেলা থেকে খুব মেধাবী ছিলেন কিন্তু সংসার জীবনে প্রবেশ করে মা শুধু লক্ষ্মীই হয়ে উঠলেন এবং সেই থেকে এখনো পর্যন্ত দেখছি ঘর সামলানোর কাজ মা কত সুনিপুভাবে করে আসছেন। মা আমার আজন্মের শিক্ষালয়। এখনো সাংসারিক, আধ্যাত্মিক বিভিন্ন বিষয়ে মা আমাকে শেখান। জীবন যাপনের ব্যস্ততার কারণে অতটা সময় দিতে পারি না মাকে। যখন সুযোগ হয় মায়ের কাছে গেলেই মা কোনো না কোনো জ্ঞান দেবেই। এটা এভাবে করবি, ওটা ওভাবে রাখবি ইত্যাদি। খুব সভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হয়েও খুব সাধারণ, সহজ সরল একটা জীবন যাপন করে আসছেন আমার মা। খুব মিশুক প্রকৃতির একজন মানুষ আমার মা মানুষকে ভালোবাসেন আর যারা মাকে চেনে সবাই মাকেও খুব ভালোবাসে। পরিচিত কাউকে পেলেই মা গল্প জুড়ে দেন।
সেই সময়ে মা হাবিলসদ্বীপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। হাবিলাসদ্বীপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার ব্যবস্থা না থাকায় শাকপুরা প্রবর্তক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে তিন বিষয়ে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ওই বছর গ্রাম থেকে আমার মা একজনই বিজ্ঞান বিষয়ের উপর লেখাপড়া করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে দুই বিষয়ে লেটার মার্ক প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। সেই বছর মার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর মা সংসারে জড়িয়ে পড়েন। আমি যখন হাবিলাসদ্বীপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ি, একদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় হারাধন স্যার আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার মা কেমন আছে? তুমি কি জানো তোমার মা একসময়ে গ্রামের সরস্বতী ছিলেন? এই কথা শোনার পর আমার মন গর্ভে ভরে উঠেছিল। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি অপার কৃতজ্ঞ আমাকে তিনি এমন একজন গুণী মায়ের গর্ভে জন্ম দিয়েছেন। আমি সত্যিই গর্বিত মা তোমার সন্তান হিসেবে জন্ম নিয়ে।