আড়াই হাজার বছর পূর্বে এই পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিলেন ত্রিলোকপূজ্য মহাকারুনিক গৌতম বুদ্ধ। বৈশাখী পূর্ণিমার শুভ ক্ষণে মহামায়ার কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় কুমার সিদ্ধার্থ। মহামায়ার মনের ইচ্ছে সিদ্ধ বা পূর্ণ হওয়ায় নাম রাখা হয় কুমার সিদ্ধার্থ। তিনি ছোট বেলা থেকেই জীবের প্রতি দয়াশীল ছিলেন। জীবের কল্যাণে ও দুঃখ থেকে মুক্তির জন্য সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদ, স্ত্রী সন্তান যাবতীয় রাজসুখ উপেক্ষা করে আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে গৃহ ত্যাগ করেন। ছয় বছর কঠোর সাধনা করে যখন জীবের দুঃখ মুক্তির সংকল্পে শারীরিক দেহ অন্তরায় হল তখন তিনি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করলেন। সুজাতার প্রদত্ত পায়েসান্ন গ্রহণ করে গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন। বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে ধ্যান সাধনা ও মার কে পরাজিত করে বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ হন। বুদ্ধ হওয়ার পর তিনি চিন্তা করলেন এই ধর্ম সহজ নয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ধর্ম পালন করা সম্ভব নয়। এই কথা মহাব্রহ্মা জানতে পেরে বুদ্ধকে বলেছিলেন, আপনি এ জ্ঞান সবার মাঝে প্রচার করুন। সবাইকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে দুঃখ মুক্তির পথ দেখান। মহাব্রক্ষার অনুরোধে বুদ্ধ পঁয়তাল্লিশ বছর দেব মানবের কল্যাণে অমৃত শান্তির বাণী প্রচার করেছিলেন। সর্ব জীবের প্রতি দয়া, করুণার আধার, উঁচু নিচু ভেদাভেদ বুদ্ধকে কখনো স্পর্শ করেনি। সবার মাঝে অহিংসার অমৃত বাণী প্রচার করেছিলেন। অহিংসা পরম ধর্ম মূলনীতিতে বুদ্ধ বিশ্বাসী ছিলেন। বুদ্ধের বাণীগুলো প্রাত্যহিক জীবনে মেনে চললে আমাদের জীবন সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত হবে। বুদ্ধ পরিণিবার্ণের পূর্ব মুহূর্তে ভিক্ষুসংঘকে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন, নিজেই নিজের মুক্তির জ্ঞান লাভ করো। আত্মশক্তি অর্জন করো। মুক্তির পথে অগ্রসর হও। আমি নেই পৃথিবীতে এই রূপ মনে করো না। আমার ধর্ম বাণী তোমাদের পথ দেখাবে। নিজে পরিশুদ্ধ থাকবে। সঠিক ধর্ম প্রচার করবে। তবেই জগতের কল্যাণ হবে। এই শেষ উপদেশ দিয়ে বুদ্ধ সবাইকে কাঁদিয়ে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হলেন। এ সময় দেব ব্রহ্মা সকল মানুষ বুদ্ধের চতুর্দিকে ঘিরে বসেছিল। দেবতারা আকাশ থেকে পুষ্প বৃষ্টি বর্ষণ করল।একই তিথিতে বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্বজ্ঞান লাভ ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। তাই বৌদ্ধদের কাছে এটি ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা নামে খ্যাত। এটি বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধরা বিভিন্ন ধমীর্য় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করে থাকে। বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র দিন।