ছোট হয়ে যাচ্ছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাজার

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা পাওনাদারের টাকা মেরে উধাও হওয়ার ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৬ মে, ২০২৫ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং নৌ পথে পণ্য পরিবহনে ধসসহ নানা কারণে ছোট হয়ে যাচ্ছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাজার। গত দেড় দশকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছে অনেক শিল্পগ্রুপ। এছাড়া সম্প্রতি পাওনাদারদের টাকা মেরে উধাও হওয়ার ঘটনাতেও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অন্যদিকে এক সময় ভারি বৃষ্টিপাত ছাড়া শুধুমাত্র জোয়ারের পানিতেই চাক্তাই খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যেতো। তবে বর্তমানে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের কর্ণফুলী মোহনায় নির্মিত স্লুইচ গেটের সুফল পাচ্ছেন ব্যবাসায়ীরা। এখন আর আগের মতো জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে না। তবে স্‌্লুইচ গেটের প্রবেশ গেট ছোট হওয়ায় বড় নৌকা প্রবেশ করতে পারছে না চাক্তাই খালে। এতে নৌ বাণিজ্যে ধস নেমেছে।

খাতুনগঞ্জের প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে আগের জৌলুস ফিরিয়ে আনতে হলে সড়ক প্রশস্ত করে যানজট কমাতে হবে। কারণ যানজটের কারণে বিভিন্ন ট্রাক কাভার্ডভ্যানের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। এছাড়া সড়কের পাশাপাশি নৌপথে পণ্য পরিবহন বাড়াতে হবে এবং ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ এই ওজন স্কেল চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের আর কোনো মহাসড়কে ওজন স্কেল নেই। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্যবসায়ীরা এই ওজন স্কেলের কারণে একটি ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারছে না।

অন্যদিকে অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সেখানে ১৬ থেকে ১৭ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করছে একই পরিবহন ভাড়ায়। যা ভোগ্যপণ্যের দামেও প্রভাব পড়ছে। এছাড়া এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আমদানিকারকরা চাক্তাইখাতুনগঞ্জে পণ্য গুদামজাত করে সারা দেশে সরবরাহ দিতেন। এখন সেই সব আমদানিকারকরা লাইটার জাহাজে করে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ কিংবা যশোরের নওয়াপড়ায় পণ্য আনলোড করছেন, শুধুমাত্র সড়কপথে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ছোট বড় প্রায় ১০ হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। বাপদাদার আমল থেকেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এই বাজারের ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পাওনা টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এতে বিশ্বাসের বাণিজ্য বিশেষত্ব হারাচ্ছে, আবার বাজারের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসাবাণিজ্য কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপন। দেশের আর কোনো মহাসড়কে ওজন স্কেল নেই। এটি চট্টগ্রামের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ বলে মনে করি। শুধু ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে কেন ওজন স্কেল থাকবে? আমাদের মনে হয়েছে, ওজন স্কেল স্থাপনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসাবাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর বলেন, একটা সময় মৌখিক বিশ্বাসই ছিল খাতুনগঞ্জের লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। বছরের পর বছর এই প্রথাই চলে আসছিল। তবে টানা কয়েকটি প্রতারণার ঘটনায় সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। ফলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস আগের জায়গাতে নাই। এতে ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আহসান খালেদ পারভেজ বলেন, আমাদের চাক্তাইয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যানজটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করে ফেলেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়া ফিরছেন আজ
পরবর্তী নিবন্ধঅভয়ারণ্য এলাকায় বসতি, বৃদ্ধকে আছড়ে মারল হাতি