প্রথম ম্যাচের বড় ব্যবধানে জিতেছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালো এমনভাবে। ঠিক সেভাবে পাত্তাই পাচ্ছে না লঙ্কানরা। দাপুটে সেই পথচলায় টানা তৃতীয় জয়ে বাংলাদেশের যুবারা নিশ্চিত করল, এই সিরিজ তারা হারছে না। দ্বিতীয় ম্যাচে যার বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু, এই ম্যাচেও আরেকটি সেঞ্চুরিতে নায়ক সেই জাওয়াদ আবরার। যুব ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৪৬ রানে উড়িয়ে ছয় ম্যাচের সিরিজে ৩–১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। কলম্বোতে শনিবার ৫০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৮ উইকেটে ৩৩৬ রান। দেশের বাইরে যুব ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এটি। দেশের মাঠেও এর চেয়ে বড় ইনিংস আছে স্রেফ একটি। ২০১৯ সালে লঙ্কানদের বিপক্ষে চট্টগ্রামে রান ছিল ৩৪০। সেবার সেঞ্চুরি করেছিলেন তাওহিদ হৃদয়, এবারের সেঞ্চুরিয়ান জাওয়াদ আবরার। গত সোমবার ১০৬ বলে ১৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন এই ওপেনার। এবার তার ব্যাট থেকে আসে ১১৫ বলে ১১৩ রান। যুব ওয়ানডেতে একাধিক সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের চতুর্থ ওপেনার তিনি। এছাড়া চারে নেমে ৭৭ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলেন রিজান হোসেন। শেষ দিকে দারুণ ক্যামিও খেলেন কয়েকজন। সেই রান তাড়ায় শুরু থেকেই মুখ থুবড়ে পড়ে লঙ্কান ব্যাটিং। ধুঁকতে ধুঁকতে তারা শেষ পর্যন্ত করতে পারে ১৯০ রান। কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচে প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরু করেন জাওয়াদ, তৃতীয় বলে বল বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি আরেকবার। ম্যাচের প্রথম ছক্কাটি মারেন চতুর্থ ওভারেই। আরেক প্রান্তে কালাম সিদ্দিকির শুরুটাও ছিল ভালো। দুই ওপেনার মিলে প্রথম সাত ওভারে ছয়টি চার ও এক ছক্কায় রান তোলেন ৪৯। ২৪ বলে ১৯ রান করে কালামের বিদায়ে ভাঙে শুরুর জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক আজিজুল হাকিমের সঙ্গে জাওয়াদের জুটিতে আসে ৩৮ রান। আজিজুল রান আউটে ফেরেন ৩১ বলে ২৩ রান করে। ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটি আসে এরপরই। জাওয়াদ ও রিজান হোসেন চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ১৩৫ রান। জাওয়াদ ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৫ বলে। এরপর কিছুটা সতর্ক ব্যাটিং ইনিংস বড় করায় মন দেন তিনি। রিজান কিছুটা সাবধানী ব্যাটিংয়ে শুরুর পর আত্মবিশ্বাস পেয়ে যান সানুজা নিন্দুওয়ারাকে ছক্কা মেরে। পরে টানা দুটি ছক্কা মারেন তিনি লেগ স্পিনার হিমাল রাভিহানসাকে। দুজনের ব্যাটে দ্রুত বাড়তে থাকে রান। রিজান যুব ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটির স্বাদ পান ৪৯ বলে। একটু পরই জাওয়াদ পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। ৯৫ থেকে দুলনিথ সিগেরাকে ছক্কায় তিনি পূর্ণ করেন শতরান। তিন দিনের মধ্যে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটি। সেঞ্চুরির এক বল পরই চার মারেন জাওয়াদ। তবে আউট হয়ে যান একটু পরই। ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৫ বলে ১১৩ রানে শেষ হয় ইনিংস। শতরানের হাতছানি ছিল রিজানের সামনেও। তবে ৪৪তম ওভারে দল আড়াইশ ছোঁয়ার পর আউট হয়ে যান তিনি ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৭ বলে ৮২ রান করে। পরের ব্যাটসম্যানদের কার্যকর ব্যাটিংয়ে শেষটাও ভালো করে বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে আসে ১১০ রান। কিপার–ব্যাটসমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ দুই ছক্কায় করেন ২৭ বলে ৩২ রান, ১১ বলে ২১ করেন দেবাশিস দেবা। ৩ ছক্কায় ৮ বলে ২৩ করেন সামিউন বশির, ৯ নম্বরে নেমে ৫ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন আল ফাহাদ। শেষ ৬ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৮৫ রান। ১০ ওভার বোলিং করে ৯৬ রান দেন রাসিথ নিমসারা। যুব ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার হয়ে সবচেয়ে খরুচের বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। সব মিলিয়ে চতুর্থ খরুচে। বড় রান তাড়ায় লঙ্কানদের আশার সমাপ্তি একরকম শুরুতেই। ওপেনার দুলনিথ সিগেরাকে শূন্য রানে ফেরান আল ফাহাদ, আরেক ওপেনার রেহন পেইরিসকে ১ রানেই থামান অভিষিক্ত সানজিদ মজুমদার। ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে উইকেটের দেখা পান অধিনায়ক আজিজুল হাকিমও। চামিকা হিনাটিগালা চেষ্টা করছিলেন পাল্টা আক্রমণের। সাত চারে ১৮ বলে ৩০ রান করা ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে দেন ফাহাদ। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৪ উইকেটে ৩৬। পরে অধিনায়ক দেনুরা দিনসারা লড়াই করে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন ৭২ বলে। কাভিজা গামাগের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান। শেষ দিকে ২৯ বলে ৩৯ রান করে কিছুটা ব্যবধান কমান ৯ নম্বরে নামা রাসিথ নিমসারা। তার পরও বাংলাদেশের জয় বিশাল ব্যবধানে। লঙ্কানদের ইনিংস শেষ হয় ৬৮ বল আগেই। সিরিজের পরের ম্যাচ কাল সোমবার। ম্যান অব দা ম্যাচ : জাওয়াদ আবরার।