একজন বিবেকবান মানুষ নৈতিক মূল্যবোধের অধিকারী হতে পারেন। একজন আদর্শ শিক্ষক যে কোন ছাত্র–ছাত্রীদের মূল পথপ্রদর্শক। শিক্ষকের কথার গুরুত্ব বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের নজরবন্দী হয়। যখন একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মনে সঠিক জায়গা করে নিতে পারে এবং শিক্ষার্থীরা ও সেই মত শিক্ষকের কাছে তাদের সব কথা খুলে বলার ইচ্ছা ব্যক্ত করে ঠিক তখনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো মন্দের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
শিক্ষকতা কেবল একটা চাকরি নয়। শিক্ষকতার পরিসর কেবল সময় বেঁধে অফিসে যাতায়াত আর ক্লাস–পরীক্ষা নেওয়ার মধ্যে সীমিত নয়। একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে পড়াবেন, ক্লাসরুমের বাইরেও শেখাবেন। একজন শিক্ষকের শেখাবার গণ্ডি হতে হবে সুদূর বিস্তৃত। পেশাগত নৈতিকতার মূল বিষয়গুলো সব প্রতিষ্ঠানে একই পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেহেতু মানুষ গড়ার আদর্শ কারখানা, সেখানে শিক্ষকদের পেশাগত নৈতিকতা অবলম্বন অন্য পেশা থেকে একটু ভিন্ন ও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যে প্রতিষ্ঠানে সব লোকের সঙ্গে সমানভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে আচরণ করা হয়, সেখানে নৈতিক মান বজায় রাখা নিশ্চিতভাবেই সম্ভব এবং সে প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধির পাশাপাশি একজন শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্যও এটি একটি শক্তি হিসাবে কাজ করে। শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা হ্রাস–বৃদ্ধিতেও শিক্ষকের রয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা। একজন শিক্ষক যিনি সততা, সম্মান এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করেন, সত্যিকার অর্থে তিনিই তার ছাত্রদের মধ্যে এই মূল্যবোধগুলো স্থাপন করতে পারেন, দায়িত্ববোধ এবং ভালো নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারেন। পাঠ্যক্রমের বাইরে, শিক্ষকের আচার–আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্যবোধ একজন শিক্ষার্থীর চরিত্র, প্রেরণা এবং মানসিক সুস্থতাকে গঠন করতে পারে। নীতিকথা নিয়ে অনেক গল্প আছে, সেগুলো বলতে পারেন। শিক্ষার্থীরা এতে উজ্জীবিত হতে পারে। নীতিকথাগুলো তাদের মনের গভীরে শিকড় গাড়তে পারে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশপ্রেমে জাগ্রত হয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে ভালো কাজ করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহী করতে হবে। নেতিবাচক চিন্তাচেতনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতে হবে। শিশুকালকে তুলনা করা হয় কাদামাটির সঙ্গে। কাদামাটি নরম থাকে, তাই সেটি দিয়ে যেকোনো জিনিস গড়া যায়। সেভাবে শিশুকেও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতি লক্ষ্য রেখে তৈরি করতে হবে। কবির ভাষায় ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’।
‘নৈতিক শিক্ষা আলোকিত মানুষ গড়তে সাহায্য করে। আলোকিত মানুষরাই তো এক দিন গড়ে তুলবে আলোকিত দেশ।