কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার বদলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখন, কোথায়, কীভাবে হামলা চালানো হবে তা ঠিক করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গতকাল এক জরুরি বৈঠকে মোদী সশস্ত্র বাহিনীকে এই স্বাধীনতা দেন। এদিকে ভারতের সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের আইন ও বিচার মন্ত্রী আকিল মালিক বলেন, ইসলামাবাদ এই বিষয়ে অন্তত তিনটি বিকল্প আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সিন্ধু পানিবন্টন চুক্তি করার ক্ষেত্রে যাদের বড় ভূমিকা ছিল, সেই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকতে পারেন তারা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে হেগ এর আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে ইসলামাবাদ। অপরদিকে, আজাদ কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)-এর কাছে একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডনের অনলাইন সংস্করণে এ তথ্য জানানো হয়। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দাবি, কোয়াডকপ্টারটি সীমান্তের ওপার থেকে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সেটিকে গুলি করে নামিয়ে আনে।
ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, গতকাল প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজ বাসভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান–সহ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানেই মোদী স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন খুশি, যেখানে খুশি পহেলগাঁওয়ে হামলার বদলা নিতে পারে ভারতীয় সেনা, বিমান ও নৌ–বাহিনী। কীভাবে হামলা চালানো হবে, কীভাবে পরিকল্পনা করা হবে– সে সব সিদ্ধান্তও স্বাধীনভাবেই নেবে এই তিন বাহিনী। যেমনভাবে মনে হবে, সেরকমভাবেই অভিযান চালানোর জন্য তাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তিন বাহিনীর ওপরই পূর্ণ আস্থা রেখেছেন তিনি।
ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং এবং নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠীর সামনেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, কীভাবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে, লক্ষ্যবস্তু কী হবে এবং কখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।’ বৈঠক চলে মোট ৯০ মিনিট। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত সপ্তাহেই পাকিস্তানকে ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সুর ছিল প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠেও। সেই আবহেই ভারতে একের পর এক জরুরি বৈঠক চলছে। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠক হয়।
এর ঠিক এক সপ্তাহ আগের মঙ্গলবারেই জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যেই জম্মু ও কাম্মীরের অর্ধেকের বেশি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করেছে ভারত। জানা গেছে, সেখানের অন্তত ৪৮টির বেশি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। বাকি পর্যটনকেন্দ্রও ধীরে ধীরে বন্ধ করতে পারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। হামলার পর ভারতের নিরাপত্তাবাহিনী কাশ্মীরে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে অনেক বাড়িঘর। এর আগে উসকানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগে ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে ব্রিটিশ সমপ্রচার মাধ্যম বিবিসিকেও।