ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানে নদীর পানি প্রবাহ আটকাতে পারবে?

| রবিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

ভারতশাসিত কাশ্মীরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ওই আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে এখন প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি আসলেই সিন্ধু নদী ও এর আরও দুটো শাখা নদীর পানির প্রবাহ পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করে দিতে পারবে?

এই চুক্তির অধীনে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের ছয়টি যৌথ নদীর পানি ন্যায্যতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বে এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলো। গত কয়েক দশকে ভারতপাকিস্তানের মাঝে দুটো যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু চুক্তি বাতিল হয়নি।

ওই হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এই চুক্তি সেগুলোর মাঝে অন্যতম। ভারত বলছে, সীমান্তে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পাকিস্তানের মদদ আছে। যদিও পাকিস্তান তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। দেশটি বরং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পানি

আটকে দেওয়ার যে কোনো পদক্ষেপ ‘যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে।’

চুক্তি অনুযায়ীসিন্ধু অববাহিকার রাভি (ইরাবতী), বিয়াস (বিপাশা) ও সুতলেজ (শতদ্রু) নদীর পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ। আর সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পানি পায় পাকিস্তান। তবে এই নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে আগেও দুই দেশের মাঝে বিরোধ হয়েছে। এসব নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো প্রকল্প করতে চাইলে তাতে বাধ সাধে পাকিস্তান। তাদের যুক্তি, এতে নদীর প্রবাহ হ্রাস এবং এটি চুক্তির লঙ্ঘন। যদিও পাকিস্তানের কৃষিকাজের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ সিন্ধু অববাহিকার ওই তিন নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল।

এখন, এই চুক্তি স্থগিত বা বাতিল বলতে আসলে কী বোঝায়? ভারত কি সিন্ধু অববাহিকার পানি আটকে দিতে পারবে? এটি কি আদৌ ভারতের পক্ষে করা সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীতে যখন অনেক বেশি পানির প্রবাহ থাকবে, তখন ওই শত শত কোটি ঘনমিটার পানি আটকানো ভারতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। কারণ ওই বিপুল পরিমাণ পানি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মতো সংরক্ষণাগার বা খাল, কোনোটাই ভারতের নেই। খবর বিবিসি বাংলার।

ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন যে ওই চুক্তির অধীনে সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ২০ শতাংশ পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ করা থাকলেও যথাযথ অবকাঠামো না থাকার কারণে ভারত তার অনেকটাই ব্যবহার করতে পারেনি। এ কারণেই ভারত জলাধার নির্মাণ করতে চায়। কিন্তু পাকিস্তান মনে করে, ওই তিন নদীতে অবকাঠামো নির্মাণের অর্থ চুক্তিলঙ্ঘন। তবে এখন চুক্তি স্থগিত হওয়ায় ভারত ওই নদীগুলোতে নতুন করে বাঁধ দিতে পারবে বা পুরনো অবকাঠামোকে পরিবর্তন করতে পারবে বা পাকিস্তানকে না জানিয়ে পানিও সরাতে পারবে। যদিও চুক্তি থেকে সরে এলেও ভারত রাতারাতি ওই তিন নদীতে কোনো প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে না।

ভারত পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও বা রাতারাতি নতুন কোনো অবকাঠামো স্থাপন না করলেও যেসব অবকাঠামো ইতোমধ্যে ভারতের কাছে আছে, ওগুলো দিয়ে ভারত যদি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে শুষ্ক মৌসুমে পাকিস্তানে তার প্রভাব পড়বে। কারণ তখন দেশটিতে এমনিতেই তীব্র পানির সংকট থাকে। ওই শুষ্ক মৌসুমে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এখন তা বেশ উদ্বেগের বিষয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে পানি প্রবাহসংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগি করতে হয় বা জানাতে হয়। ওগুলো বন্যা পূর্বাভাস, সেচের পরিকল্পনা, পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সুপেয় পানির জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু এখন ভারত পাকিস্তানকে আর বন্যার তথ্য দিতে বাধ্য না। পাকিস্তানের ওই অঞ্চলটি জুনের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার কবলে পড়ে। তবে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত এমনিতেই খুব সীমিত তথ্য শেয়ার করে।

এই অঞ্চলে যখনই পানি নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়, তখনই প্রশ্ন ওঠেউজানের দেশ কি ভাটির দেশের প্রতি পানিকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে কি না। এই পরিস্থিতিকে অনেক সময় ‘জল বোমা’ বলা হয়, যেখানে উজানের দেশ সাময়িকভাবে পানি আটকে রাখতে পারে এবং তারপর কোনোপ্রকার সতর্কতা ছাড়াই সে হঠাৎ করে ওই পানি ছেড়ে দিতে পারে, যা ভাটির দেশের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত যদি ‘ওয়াটার বোম্ব’ বা ‘জল বোমা’ ব্যবহার করে, তাহলে তার নিজের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোই সর্বপ্রথম বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ তাদের বেশিরভাগ বাঁধই পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে অনেক দূরে। তবে এখন ভারত চাইলে কোনও পূর্বসতর্কতা ছাড়া তার জলাধার থেকে পলি অপসারণ করতে পারে। এটি করলে ভাটিতে থাকা পাকিস্তান ভয়াবহভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। হিমালয় থেকে নেমে আসা সিন্ধুর মতো নদীগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি থাকে, যা বাঁধ বা ব্যারাজে দ্রুত জমে যায়। হঠাৎ করে ওই পলি ছেড়ে দিলে তা ভাটির বড় ক্ষতি করতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যে নষ্ট দুই হাজার একর ধানক্ষেত
পরবর্তী নিবন্ধপোপ ফ্রান্সিসকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা