পলিথিন নিষিদ্ধের প্রায় ছয় মাস পার হতে চললেও চট্টগ্রাম নগরে এর ব্যবহার আগের মতোই রয়েছে। বাজারে গেলে বোঝার উপায় নাই যে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানুষ আগের মতোই এর ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাজারে বা দোকানে ক্রেতা–বিক্রেতারা অনেকেই জানান, পলিথিন যে নিষিদ্ধ এটা শুধু মাঝে মাঝে খবরে দেখি। এটা নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। এছাড়া পলিথিনের বিকল্প তেমন কিছু না থাকায় মানুষও নিরুপায় হয়ে ব্যবহার করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অনেকের বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বা পলিথিন ব্যবহার না করার সুযোগ থাকলেও সচেতনতার অভাবে সেটাও হচ্ছে না। পলিথিন ব্যবহার বন্ধের জন্য সচেতনতা বেশি দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে নির্দেশনা না মেনে অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যবহার। পলিথিনের ব্যবহার, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কোনো কিছুই বন্ধ নেই। সুপারশপ থেকে শুরু করে দোকানপাট, কাঁচা বাজার এবং ভ্রাম্যমাণ দোকান সবখানেই পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে। গত বছরের ১ নভেম্বর পরিবেশের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে সারাদেশে একযোগে পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এর পরিবর্তে পাট, কাপড়ের ব্যাগ বা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করতে বলা হয়। তারও আগে গত ১ অক্টোবর সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যবহার বর্জন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটিও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। নির্দেশনা দেওয়ার পর কিছুদিন অভিযান চালাতে দেখা গেছে। এরপর এটা নিয়ে তেমন মাতামাতি নেই।
নগরের বিভিন্ন বাজার এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৩টি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কেউ বাসা থেকে ব্যাগ আনেন না। একেকজন একাধিক দোকান থেকে সদাই কিনছেন সব দোকান থেকে পলিথিন নিচ্ছেন। কাস্টমার ও দোকানি অনেকেই জানেন না পলিথিন ব্যাগ যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার নিষিদ্ধের বিষয়টি জানলেও তেমন আমলে নিচ্ছেন না কেউ। দোকানিরা জানান, পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে জেনেছি কিন্তু এর ব্যবহার তো বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর পরিবর্তে কী ব্যবহার করবো? মানুষও পলিথিন না দিলে জিনিস কিনছে না। আর অনেকেই জানেন না যে পলিথিন নিষিদ্ধ। ক্রেতারা জানান, পরিবেশের কথা বিবেচনা করে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু কেউ তো মানছে না। আমরাও কষ্ট না করার জন্য নিই। চাইলে তো বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসা যায়। সামগ্রিকভাবে সচেতনতা না আসলে হবে না। সবাই রেডিমেইড চায় সবকিছু। কেউ কষ্টও করতে চায় না, টাকাও খরচ করতে চায় না।
তবে পলিথিন নিয়ে প্রতিদিন সচেতনতামূলক অভিযানের পাশাপাশি মাসে কয়েকটা ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম সূত্রে জানা গেছে। সচেতনতা হিসাবে বাজারে বাজারে লিফলেট বিতরণ, বিনা টাকায় পাটের বা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ বিতরণসহ নানা কার্যক্রম করা হচ্ছে। জনে জনেও সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনিয়ন্ত্রিত পলিথিন ব্যবহারের কারণে খাল–নালা–নর্দমায় পলিথিনের স্তূপ হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রাম উচ্চ জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে থাকায় চট্টগ্রাম নগরে পলিথিনের ব্যবহার মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের পর থেকে এর বিরুদ্ধে পরিবেশ অািধদপ্তরের অভিযান চলমান রয়েছে। প্রায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসছে পলিথিনের বিরুদ্ধে। এছাড়া পলিথিন ব্যবসায়ী, দোকানি এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। এতে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। অনেক বাজারে পাটের ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। আসলে অনেক কারণে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। আর মানুষও সচেতন হচ্ছে না।