পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে হামলার পর জঙ্গিদের খোঁজে কাশ্মীরের বিভিন্ন ঘরবাড়ির পাশাপাশি বনজঙ্গলেও অভিযান শুরু করেছেন ভারতের আর্মড পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। সেখানকার বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শুক্রবার কাশ্মীর সফর করেছেন ভারতের সেনাপ্রধান।
মঙ্গলবারের ওই হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ভারত–শাসিত কাশ্মীরে প্রায় দুই দশকের মধ্যে বেসামরিক লোকজনের ওপর এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। হামলার পর দায় স্বীকার করে নেয় ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি সংগঠন, যারা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়বার একটি শাখা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, পেহেলগামের ওই হামলার পর ভারতে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে। খবর বিডিনিউজের।
নয়া দিল্লির অভিযোগ, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তান উৎসাহ দিচ্ছে এবং পয়সাও ঢালছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে। এ নিয়ে একাধিকার যুদ্ধেও জড়িয়েছে তারা। ভারত বলছে, মঙ্গলবারের হামলায় পাকিস্তানের হাত থাকার আলামত রয়েছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
পেহেলগামে হামলার প্রভাব পড়েছে ভারতের পুঁজিবাজারেও। গতকাল শুক্রবার নিম্নমুখী প্রবণতায় শুরু হয় লেনদেন। তবে দিন শেষে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে সক্ষম হন বিনিয়োগকারীরা। তবে প্রধান সূচকগুলো দশমিক ৭ থেকে দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আর দশমিক ২ শতাংশ দাম হারিয়েছে ভারতীয় রুপি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত এরই মধ্যে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় এয়ারলাইনসগুলোর জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের শীর্ষস্থানীয় দুই এয়ারলাইনস ‘ইন্ডিগো’ ও ‘এয়ার ইন্ডিয়া’ বলেছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ তাদের বেশ কিছু রুটে ফ্লাইট চলাচল বিঘ্নিত হবে।
বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, হামলাকারীদের দুনিয়ার শেষ প্রান্তে গিয়ে হলেও খুঁজে বের করা হবে। তার এ ‘অঙ্গীকারের’ পরের দিনই নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে কাশ্মীর সফরে যান সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। এদিন শ্রীনগর সফর করেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও। তিনি আহতদের পাশাপাশি সেখানকার স্থানীয় সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এর আগে ২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ প্যারামিলিটারি পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায় ভারত। এবারও তেমন কিছু ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতে এ ধরনের দাবিও উঠেছে বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বেশ কয়েকজন নেতা। আলাদা আলাদা অংশ শাসন করলেও দুই দেশই কাশ্মীরের পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা দেয়, যারা সেখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। যদিও ইসলামাবাদ এ অভিযোগ কখনো স্বীকার করেনি। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবারের হামলায় ‘আন্তঃসীমান্ত সংযোগ’ ছিল।
কাশ্মীরের পুলিশ এক নোটিসে হামলায় জড়িত তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনকে পাকিস্তানের নাগরিক দাবি করেছে তারা। ভারত সরকার অবশ্য এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা বা তথ্যপ্রমাণ সরবরাহ করেনি। মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের সবাই ভারতীয় নাগরিক বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
বিস্ফোরণে উড়ল পেহেলগামে হামলায় জড়িত ২ লস্কর জঙ্গির বাড়ি
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর–ই–তৈয়বার দুই সন্দেহভাজন সদস্য আদিল হোসেন ঠোকের ও আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরণে উড়ে গেছে বলে জানিয়েছে একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যম। এ দুজনই পেহেলগামে মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলায় জড়িত ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বাড়ি দুটি পৃথক বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়, বলেছে এনডিটিভি। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, বাড়িগুলোর ভেতরে বিস্ফোরক রাখা ছিল।
তবে আনন্দবাজারসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী ও জম্মু–কাশ্মীরের প্রশাসনই এই বাড়ি দুটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে একটি স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরকের সাহায্যে ওড়ানো হয়েছে, অন্যটি গুঁড়ানো হয়েছে বুলডোজারে। নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র আদিলকে মঙ্গলবারের পেহেলগাম হামলার অন্যতম অভিযুক্ত বলছে, তার বাড়ি অনন্তনাগ জেলায়। আর পুলওয়ামার বাসিন্দা আসিফ হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার অনন্তনাগের পুলিশ পেহেলগামে হামলায় জড়িতসন্দেহে যে তিনজনের স্কেচ প্রকাশ করেছে আদিল তার একজন। বাকি দুজনই পাকিস্তানের নাগরিক, বলছে পুলিশ। এদের ধরতে তথ্য চেয়ে ২০ লাখ রুপি পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এঙে দেওয়া নোটিসে পুলিশ হামলাকারী বাকি দুই সন্দেহভাজনের নাম বলেছে হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই। এরা দুজনও জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর–ই–তৈয়বার সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।