খরচ বাঁচাতে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে কাঁচা আম

বাগানে পোকার উপদ্রব, তাপদাহে শুকিয়ে কুচকে যাচ্ছে বোটা

আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান | শনিবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ে বেড়েছে ফলনশীল আমের আবাদ। তবে বান্দরবানে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পোকার উপদ্রব ও সেচ সংকটে আমের মুকুল ও গুটি ঝরে পড়ায় আমের আশানুরূপ ফলন উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। খরচ বাঁচাতে তাই বাগানের কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার লাইমী পাড়া, স্যারণ পাড়া, ফারুক পাড়া, গেজমনি পাড়া, বসন্ত পাড়া, ম্রোলং পাড়া, মেনরত পাড়া, ওয়াইজংশন পাড়া, চিম্বুক এবং রুমাথানচি সড়কের আশপাশের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। খরচ কমাতে বেশি লাভের আশায় বাগানিরা পাইকারদের কাছে কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কাঁচা আম বোঝাই ৫০ এর বেশি ট্রাক বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নিয়ে যেতে দেখা গেছে। আম ব্যবসায়ী সঞ্জয় চক্রবর্তী ও মো. সিরাজ বলেন, পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে উৎপাদিত রাংগোয়াই, আম্রপালি কাঁচা আম কিনে চট্টগ্রাম, ঢাকায় ফল বাজারের আড়তদারের কাছে বিক্রি করি। একেকদিন একেক দামে কাঁচা আম কিনতে হয় চাষিদের কাছ থেকে। প্রতি মণ কাঁচা আম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। চিম্বুক সড়কের আম চাষি জন বম ও মেনরত ম্রো বলেন, প্রচন্ড তাপদাহে পানির সংকটে কাঁচা আম ঝরে পড়ে যাচ্ছে। কীটনাশক ও পানি ছিটিয়ে আমের ঝরে পড়া রোধ করতে পারছি না। বাধ্য হয়েই ১৮ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। আর বাগানের ঝরে পড়া আম বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০ থেকে ১২ টাকায়। পাহাড়ি চাষিদের কাছ থেকে একেক মণ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় কাঁচা আম আচার তৈরির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। খরচ বাঁচাতে মূলত কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা।

রুমা সড়কের দলিয়ান পাড়া ও ওয়াইজংশন পাড়ার আম চাষি রেয়াংরি ম্রো ও দলিয়ান পাড়ার সানথোয়ান বলেন, কীটনাশক ছিটানোর পরও পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে বাগানে। আম ছিদ্রকারী পোকা উড়ে এসে হুঁল ফুটিয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে গাছে থাকা অবস্থাতেই আমের বোটা শুকিয়ে কুচকে যাচ্ছে। যারা ঠিকঠাক সেচ ও সঠিক মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারছেন তাদের বাগানে আম মোটামুটি ভালো রয়েছে। সাধারণ চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি অর্থ বছরে বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় ফলনশীল বিভিন্ন জাতের আমের আবাদ বেড়েছে। এবার জেলায় আমের আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১১২ মেট্রিক টন। গতবছরের তুলনায় জেলায় এবার ফলনশীল আমের চাষ বেড়েছে ৯৪ হেক্টর জমিতে। গতবছর (২০২৪ সালে) আমের চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ১০৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে জেলায় আমের চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন। আর ২০২২ সালে আমের চাষ হয়েছিল ৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এস এম শাহনেওয়াজ বলেন, ফলনশীল আমের আবাদ বেড়েছে। তবে প্রচন্ড তাপদাহে পানির সংকটে আমের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এবার হেক্টরে ১১ থেকে ১২ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। সেচ সংকট ও অনাবৃষ্টিতে ঝরে গেছে আমের মুকুল ও গুটি। অন্যবারের তুলনায় আম আকারেও ছোট দেখা যাচ্ছে। খরচ বাঁচাতে লাভের আশায় কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন বাগানিরা। এতে সঠিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ২৬৭ একর ভূমি নিয়ে জটিলতা