অরক্ষিত খাল-নালায় নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার কাজ দ্রুত শুরু করুন

| শুক্রবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

নগরের হিজরা খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু নিহত হওয়ার পর অরক্ষিত খালনালায় বেষ্টনি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে বেষ্টনি ও স্ল্যাবহীন খালনালা ও ঢাকনাহীন ম্যানহোল আছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর তালিকা প্রণয়ন করছে সংস্থাটি। গত রোববার বিকালে টাইগারপাস নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্ন বিভাগের জরুরি সভায় এ নির্দেশনা দেন মেয়র। সভায় নাগরিকদের কাছ থেকেও এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খাল, নালা, ম্যানহোলের তথ্য সংগ্রহে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সময় প্রকৌশলী ও পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, আমি আপনাদের বলেছিলাম এই ধরনের (খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু শেহরিজের মৃত্যু) ঘটনা হয়তো ঘটতে পারে। কেন বলেছি, আমি রাস্তায় ঘুরি। আমি তো দেখেছি, ম্যানহোলে ঢাকনা নেই, স্ল্যাব নেই। তিনি বলেন, ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় আমি গেলাম। রাত ২টা পর্যন্ত ছিলাম। ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিডিএর কেউ এসেছে? শুধু আর্মির যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি একবার এসেছেন। কাজেই দিন শেষে আমাদের, সিটি কর্পোরেশনকে থাকতে হবে। তাই আপনারা সবাই চেষ্টা করেন। কেউ যেন আমাদের দিকে আঙুল তুলে বলতে না পারে, ম্যানহোলে ঢাকনা নেই, নালায় স্ল্যাব নেই, প্রিভেন্টিভ দেয়াল নেই।

মেয়র বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনায় আমরা কেউ দায় এড়াতে পারি না। একজন নগরবাসী হিসেবে ও মেয়র হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে।

নগরবাসীর অভিযোগ, চট্টগ্রামে সেবা সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনার খেসারত বছরজুড়ে দিতে হয় নগরের বাসিন্দাদের। খাল ও নালানর্দমায় পড়ে মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এর মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ও কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবু টনক নড়েনি নীতিনির্ধারকদের। বছরজুড়ে এ ধরনের অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নিজেদের দায় এড়িয়েছে। ঘটনার দায় পরস্পরের কাঁধে চাপিয়েছে দুটি সংস্থা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খালনালা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে প্রায় ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি স্থানে। এসবের ১০ শতাংশ নালাতেও নিরাপত্তাবেষ্টনীর কাজ হয়নি।

নগরে উন্মুক্ত খালনালাগুলোর পাশে বেষ্টনী দেওয়ার কথা বারবার বলে আসছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তবে এতেও ইতোপূর্বে টনক নড়েনি সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় প্রতিবারই খালনালায় বেষ্টনীর বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে তা কেবল আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। মৃত্যুর ঘটনার পর শুধু অস্থায়ী বেষ্টনী দিয়ে দায় সারা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব খালনালা সড়কের পাশে আছে, সেগুলোতে বেষ্টনী দেওয়া জরুরি। তা না হলে বৃষ্টি হলে নালা এবং সড়ক পানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন সড়ক নালা বোঝা যায় না। মূলত এ কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। খালনালায় পড়ে একের পর এক মৃত্যু ঘটলেও সিটি করপোরেশন ও সিডিএ নগরবাসীর সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়নি। মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করছে এই দুটি সংস্থা। এগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, অবহেলায় হত্যাকাণ্ড।’ তাঁরা বলেন, প্রতিটি মৃত্যুর পর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলা হলেও থামানো যায়নি মৃত্যুর মিছিল। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব খালনালা হয়ে উঠে মৃত্যুফাঁদ। যা নিয়ে নগরবাসী রীতিমতো আতঙ্কিত। তাদের একটিই প্রশ্ন, এ মৃত্যুর মিছিল কি থামবে না?

প্রত্যেকটি মৃত্যুর পর কিছুদিন আলোচনা চলে। সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি হয়। কোথাও কোথাও স্ল্যাব ও নিরাপত্তাবেষ্টনী বসানোর কাজও চলে। তারপরই যেন থেমে যায় সব। কারণ প্রতি বছর এভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও নগরীর খাল ও নালার বড় অংশই এখনও উন্মুক্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অবিলম্বে খালনালার অরক্ষিত অংশগুলো চিহ্নিত করে নিরাপত্তাবেষ্টনী ও স্ল্যাব বসানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। যেসব স্থানে স্ল্যাব ও নিরাপত্তাবেষ্টনী রয়েছে, সেগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের পাশাপাশি কোথাও স্ল্যাব সরে গেলে সেগুলোও পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে