প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে

১৩৮ তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবসের মতবিনিময়ে চবক চেয়ারম্যান

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে আমাদের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিজনেস সামিটে নতুন বিনিয়োগ আসছে। প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাঁচ বছর পর ৫ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে হবে।

তিনি বলেন, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) দিয়ে দেয়ার একটা কথা বলা হচ্ছে। যে কথাগুলো বলা হয়, এগুলো আসলে বিভ্রান্তিকর কথা। আমরা এনসিটির মালিকানা কাউকে দিয়ে দিচ্ছি না। আপনি যদি একটা বিল্ডিং বানান, যদি সেটা ভাড়া দেন, এটাও ঠিক ওরকমই। মালিকানা আমাদেরই থাকছে, আমরা শুধু তাদের (বিদেশি প্রতিষ্ঠান) টার্মিনালের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ করছি, যেমনটা আমরা পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে (পিসিটি) করলাম।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১৩৮ তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, বেটার্মিনালে যেটা হবে, সিসিটিওয়ান যেটা হবে, সেটা করবে সিঙ্গাপুর। সিসিটিটু করবে ডিপি ওয়ার্ল্ড (দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান)। ঠিক একইভাবে এনসিটির জন্য গভর্নমেন্ট লেভেলের নির্দেশনা অনুযায়ী যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুসারে কাজ চলমান আছে। এটাই দুই দেশের কমিটমেন্ট অনুসারে কাজ চলছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এটার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও ওভাবে ফাইনালাইজ হয়নি। আমাদের ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইজার আছে, তাদের কাজ চলছে, তাদের প্রতিবেদন পেলে বুঝতে পারব। আমরা যাই করি না কেন, রাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণ করে, দেশের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে করা হবে। আমরা এখানে যারা আছি, কেউই কিন্তু পার্মানেন্ট না। কাজেই আমাদের হাত দিয়ে যে কাজটা হবে, সেটা দিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষ যেন উপকৃত হয়, রাষ্ট্রের যে স্বার্থ সেটা যেন নিশ্চিত হয়। সেটা নিশ্চিত করেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বিদেশী অপারেটরদের এমনভাবে নিয়োগ দেব, সেটা প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় দেব, আর্থিকভাবে আমরা যাতে সর্বোচ্চ বেনিফিটেড হই, সেভাবে দেব। দ্বিতীয়ত এটার মাধ্যমে আমাদের দক্ষতা নিশ্চিত হবে। তখন টার্মিনালটার্মিনালে কম্পিটিশন হবে। তৃতীয়ত এটার মাধ্যমে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি দ্রুত হবে। জাহাজের ভাড়া কমে যাবে, কন্টেনারের ভাড়া কমে যাবে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে, ভবিষ্যতে জাহাজ ও কন্টেনার ভাড়া কত কমানো যায় আর কত দক্ষতা বাড়ানো যায়। এজন্য বিদেশী টার্মিনাল অপারেটরদের দিলে প্রতিযোগিতা বাড়বে, তারা কার্গো জেনারেট করবে এবং রিজিওনাল হাব হিসেবে ব্যবহার হবে। এখান থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট হবে, কোস্টাল কানেক্টিভিটি স্টাবলিশ হবে। নিজেরা করলে এসব অ্যাডভান্টেজ তো আমরা নিতে পারবো না। কিন্তু উনারা যেহেতু ইনভেস্ট করবেন, উনারা এটাকে আরও এফিশিয়েন্ট করার চেষ্টা করবেন।

বন্দর চেয়ারম্যান আরো বলেন, দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার খ্যাত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটির প্যাকেজ( ২টি জেটি নির্মাণ) এর জন্য জাপানিজ প্রতিষ্ঠান পেন্টা ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও টোয়া কর্পোরেশনের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর গত ২২ এপ্রিল সম্পন্ন হয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৯ সাল নাগাদ অপারেশনে আসবে বলে আশা করা যায়। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরকে রিজিওনাল ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসাবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসাবে জাইকার সহযোগিতায় বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটিরই দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি গত বছরের ৭ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় সিভিল, ড্রেজিং, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি এবং জাহাজসমূহ ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয় চুক্তি ইতোমধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। সিভিল ও ড্রেজিং কার্যক্রমের চুক্তি অতি শিগগিরই সম্পাদিত হবে এবং নির্মাণ কার্যক্রম অতিদ্রুত শুরু করা হবে।

রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। এ মাস দেশ ও বন্দরের জন্য সৌভাগ্যের। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর অপারেশনে চলে যাবে। বন্দর ও কাস্টমসকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। এর সুফল দেখতে পাচ্ছেন। নিলামে গতি এসেছে। ইটিকিটিং চালু করায় সব সিস্টেমে চলে আসছে। মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করছি। এতে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। পেমেন্ট ডিজিটাল হয়ে যাবে। ডিজিটালাইজেশন ও ডিকার্বোনাইজেশনের বিকল্প নেই। জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন করে ফেলব। গ্রিন মেরিটাইম করিডোর হবে চট্টগ্রাম বন্দর। মাতারবাড়ি, বেটার্মিনাল, লালদিয়া হবে গ্রিন পোর্ট। এ টার্মিনালগুলো চালু হলে নতুন শিপিং রুট খুলে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিয়ের তারিখ ঠিক করার আগেই দুই জনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে