চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে পাকা স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক চলছে, বিভিন্ন কৌশলে কাটা হচ্ছে টপ সয়েল। ধানি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এতে ছোট হয়ে আসছে গুমাই বিল, নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা, হচ্ছে পরিবেশের বিপর্যয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আয়োজনে গুমাই বিল রক্ষা বিষয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা সভায় এসব সমস্যার বিষয় তুলে ধরে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন বিলের সাধারণ কৃষকরা।
গুমাইবিলের চন্দ্রঘোনা হাশেম খালের পাড়ে আয়োজিত সভায় কৃষকদের সাথে আলোচনায় অংশ নেন বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড ফ্যাসিলিটের মনিরা পারভীন এবং বেলা চট্টগ্রামের নেটওয়ার্ক মেম্বার সাংবাদিক আলীউর রহমান। এসময় স্থানীয় কৃষক ও কৃষাণীরা সভায় অংশ নিয়ে গুমাই বিলের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কৃষকরা জানান, গুমাই বিলে সারাবছর ধরে প্রভাবশালী মহল অবাধে মাটি ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান এবং বিভিন্ন সময় সাইনবোর্ড দিলেও তাতেও জমির শ্রেণি পরিবর্তন থামছে না। গুমাই বিলের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কাঁচা মাটির। অল্প বৃষ্টিতেই এই সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বিলে ভেঙে পড়ছে কাঁচা সড়কগুলো। তাই বিলের মাঝখান থেকে ধান কিংবা চাষাবাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কাঁধে করেও নেওয়া যায় না। এতে চাষাবাদের খরচ বেড়ে গিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। এই সড়কগুলো সংস্কার করা জরুরি। কৃষকদের জন্য নির্মিত চাউনিগুলো ভেঙে গেছে। বিলের বিভিন্ন অংশে নলকূপসহ কৃষক চাউনি নির্মাণ করা খুবই দরকার। গুমাই বিলে বয়ে যাওয়া খালগুলো তলানি ভরাট হয়ে অতিবৃষ্টিতে যে হারে পানি প্রবেশ করে সেভাবে অপসারিত হতে পারে না। তাই গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি ঢলে কিংবা ভারী বৃষ্টিতে খালের পানি উপচে কয়েকফুট পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গুমাই বিল। এসব খনন করে সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন। খালগুলোর বিভিন্ন অংশে বাঁশের সাকো নির্মাণ করে পারাপার করতে হচ্ছে। এসব জায়গায় ছোট ছোট কালভার্ট নির্মাণ করে দিলে সুবিধা হবে। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা খালগুলোতে কচুরিপানার জট। এসবের কারণে পানি প্রবাহ আটকে সেচের ক্ষতি হচ্ছে। বিলের বিভিন্ন অংশে গাড়ি যাতায়ত করা যায় এমনভাবে প্রয়োজনীয় কয়েকটি সড়ক সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান কৃষকরা। বেলার প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের এসব সমস্যার কথা শুনে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সমাধানে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার আশ্বাস দেন।
জানা যায়, প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর আয়তনের গুমাই বিলের আয়তন কমতে কমতে বর্তমানে তিন হাজার হেক্টর আয়তনে এসে ঠেকেছে। এরপরও থামছে না স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক। অথচ গুমাইবিলের এক মৌসুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায় বলে প্রচলিত রয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এই বিলের অবস্থান। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুমাই বিল। সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতা এবং জমির মালিকদের অজ্ঞতার কারণে এই বিল দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। পাশাপাশি টপ সয়েল কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে এর উর্বরা শক্তি।
এদিকে গুমাই বিলের এই বেহাল দশার কথা উঠে এসেছে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায়। সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান জানান, চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডার খ্যাত গুমাই বিল রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্য বহন করে। এই বিলকে রক্ষা করতে হলে জমি ভরাট করে দালান নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বিল রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।