বিশ্বের অনেক পুরানো স্থাপনা কিংবা বড় বড় সমাবেশ বা দুনিয়া কাঁপানো বক্তব্য স্থান পেয়েছে ইউনেস্কোর হ্যারিটেজের তালিকায়। অথচ ১১৬ বছরের পুরানো এবং ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করা চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলা নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয়নি কখনোই। তবে এবার আবদুল জব্বার সওদাগরের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হলো জব্বারের এই বলীখেলাকে যেন ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি এই বলী খেলার প্রতিষ্ঠাতা বদরপাতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগরকে যেন স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
জব্বারের বলী খেলার ১১৬ তম আসর উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি এবং বলী খেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মরহুম আব্দুল জব্বার সওদাগরকে নিয়ে গবেষণা করা, ঐতিহাসিক লালদীঘি চত্বরকে মরহুম আব্দুল জব্বার সওদাগরের নামে নামকরণ করা, চট্টগ্রামে বলীখেলা চর্চার জন্য একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা, মরহুম আব্দুল জব্বার সওদারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান, এই বলিখেলাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যেতে কিংবা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে একটি শক্তিশালী পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আশা করি সবাই সম্মিলিতভাবে এই দাবি উপস্থাপন করতে পারলে সফল হওয়া যাবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় জব্বারের বলী খেলার ১১৬তম আসর আগামী শুক্রবার (১২ বৈশাখ) বিকাল ৪টায় ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এ বলী খেলা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও লালদীঘি ময়দান ও আশপাশে ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল) তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দেশের সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলা।
তবে এবারে মেলা আয়োজনে পরিবর্তনের কথাও জানানো হয়। যার ফলে মেল একরকম সীমিত হয়ে যেতে পারে। আবদুল জব্বারের বলী খেলা চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। জব্বারের এই বলী খেলা এখন চট্টগ্রামবাসীর অন্যতম প্রধান বিনোদনের অংশ।
তাই এবারের ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলাকে ঘিরে জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচল এবং যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে আন্দরকিল্লা থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত প্রধান সড়কে মেলার স্টল না বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন। একই সাথে স্টল বিক্রি, দোকান বিক্রি, দখল, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
এবারের বলী খেলার স্পন্সর হিসেবে থাকছে গ্রামীণফোন। শুক্রবার বিকেলে বলী খেলা উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। খেলা শেষে বিজয়ী বলীদের হাতে ক্রেস্ট ও প্রাইজ মানি তুলে দেবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
প্রায় ১১৫ বছর আগে চট্টগ্রাম শহরের বদরপাতির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম আব্দুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এ অঞ্চলের যুবকদের শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে এই বলী খেলা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জীবিত থাকতে তিনি, এরপর তার পুত্রগণ এবং ১৯৮৬ সাল থেকে তার নাতীগণ চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে প্রতিবছর ১২ বৈশাখ এই বলী খেলা আয়োজন করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বলী খেলায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১০০ জন বলী আয়োজকদের সাথে যোগাযোগ করেছেন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বলী খেলা আয়োজক কমিটির আহবায়ক হাফিজুর রহমান, গ্রামীনফোনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান মোরশেদ আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনেওয়াজ প্রমুখ।