এভারেস্টের চেয়েও অন্নপূর্ণা অভিযান ছিল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ

সংবাদ সম্মেলনে বাবর আলী

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

পবর্তারোহী চিকিৎসক বাবর আলী বলেছেন, এভারেস্টের চেয়েও অন্নপূর্ণা অভিযান অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এভারেস্ট চূড়ায় আমি অনেকক্ষণ ছিলাম। এই চূড়ায় আমি ৫ মিনিটের বেশি থাকার সাহস করিনি। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রামে নেপালে অন্নপূর্ণা১ অভিযান নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাবরের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে।

বাবর আলী বলেন, আমি তো অনেক বছর ধরে পর্বতে যাচ্ছি, জীবনে মোট যত তুষার ধস দেখেছি এই একটা পর্বতে দেখেছি এর চেয়ে কয়েকগুণ। সবাই চায় কত অল্প সময় থেকে অভিযানটা শেষ করে আসবে। কারণ যত বেশি সময় থাকবেন তত ঝুঁকি থাকে। লাইফ রিস্ক তত বাড়বে। এই পর্বতে তুষার ধস হয়। অন্নপূর্ণা১ এর অভিযানের সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল ক্যাম্প২ থেকে ক্যাম্প৩ এর পথ। এই পথের খাঁড়া ঢাল বেয়ে সবসময় তুষারধস, পাথর খসে পড়া চলতেই থাকে। এসবকে অতীব সাবধানে এড়িয়ে পর্বতারোহীদের আরোহণ করতে হয়। এছাড়া সামিট পুশ (সর্বশেষ ক্যাম্প থেকে চূড়াপাণে যাত্রা) আমাদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে। ৬ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৩ নম্বর ক্যাম্প থেকে প্রায় ১৭০০ মিটার একটানা আরোহণ করে চূড়ায় পৌঁছাতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা। আর ফিরতি পথে সময় লেগেছে আরো ৯ ঘণ্টা। সাড়ে ২৬ ঘণ্টার এই সামিট পুশ শরীরের শেষ শক্তিটুকুরও পরীক্ষা নিয়েছে। আমি জীবনে পর্বতারোহণসহ ছোটবড় নানান অ্যাডভেঞ্চার করেছি। তবে অন্নপূর্ণা১ পর্বতের মতো কঠিন পরীক্ষা পূর্বে আমাকে দিতে হয়নি। তবে এত কিছুর পরও ঠিকঠাকভাবে আরোহণ করে দেশে আপনাদের মাঝে ফিরতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। পৃষ্ঠপোষকসহ বাকি সবার সহযোগিতা পেলে বাকি ৮ হাজারি মিটার পর্বতগুলোতে আমার পদচারণা অব্যাহত রাখতে পারবো।

পর্বতারোহী বাবর আরো বলেন, আমি নিজেও তুষার ধসে পড়েছি, যদিও একেবারে শেষের দিকে। আমার দলে মোট চারজনের মধ্যে একজন এস্তানিয়ান, তুষার ধসে পড়ে যান। ও অনেকগুলো অভিযান করা এ পর্যন্ত, কিন্তু তুষার ধস তার কনফিডেন্সে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে ও আর অভিযানটাই করেনি। এই মাউন্টেন সবাইকে ট্রেইন করে নেয়। আমি খুব ভাগ্যবান যে অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি। আমি আসার পরে ব্রুনো (অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রুনো লাক্রামপ) আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার ফিঙ্গার টিপস ঠিক আছে কি না। কারণ প্রথম যারা আরোহণ করেছিল মরিস হেরজগ আর লুইস লেচেনাল, তাদের মধ্যে হেরজগ তার হাতপায়ের আঙ্গুলের ডগা হারিয়েছিল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাবর আলী বলেন, চ্যালেঞ্জের দিক থেকে অন্নপূর্ণা ১০ এ ১০, এভারেস্ট ১০ এ ২ এবং লোৎসে ১০ এ ৪ বলে মনে করি। এভারেস্টে অনেক ক্লাইম্ব হয়। অন্নপূর্ণায় শুধু সিজনড ক্লাইম্বাররা যায়। তিনটি আট হাজার মিটার উচ্চতার পর্বতে সফল অভিযানের পর নিজের স্বপ্ন হিসেবে এ উচ্চতার আরও ১১টি পর্বতের চূড়ায় উঠতে চান তিনি। তিনি জয় করেছেন এভারেস্ট, লোৎসে ও অন্নপূর্ণা। তার পরবর্তী গন্তব্য নেপালের মানাসলু, যেটা অষ্টম সর্বোচ্চ। আট হাজারি ১৪টির মধ্যে সাতটি নেপাল, দুটি তিব্বত এবং পাঁচটি পাকিস্তান থেকে সামিট করা হয়। সবই গ্রেটার হিমালয়ের অংশ।

ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স ক্লাবের সভাপতি ও অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, আমরা আশাবাদী যে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শীঘ্রই বাবর আলী বাকি সবকটি আট হাজার মিটার শৃঙ্গেই হাসিমুখে দাঁড়াতে পারবে। এই কীর্তি কিন্তু নেপালের শেরপারা বাদে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শুধু একজন পাকিস্তানির আছে, তিনি হলেন শিরবাজ খান। আর সবগুলো আট হাজার মিটার পর্বত সামিটের কীর্তি আছে সমগ্র বিশ্বে মাত্র ৭১ জন পর্বতারোহীর।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রুনো লাক্রামপ, বাবর আলীর অভিযান আয়োজনকারী সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন এবং পৃষ্ঠপোষক কোম্পানি ভিজুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নূর ফয়সাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিডিএ’র আইন উপদেষ্টা হলেন তিন আইনজীবী
পরবর্তী নিবন্ধসালমান এফ রহমানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা