বিনতু, এই বিনতু, কোথায় গেলি ?
এই বলে ভর দুপুরে ডাকছেন বিনতু নামের মুরগিটির মালিক নাহার বেগম।
কিরে, বিনতু কোথায় গেলি ?
বলতে না বলতেই ছাদ বাগানের বড়ো ফুলগাছটার টবের পেছন থেকে বেরিয়ে এলো বিনতু ও তার ছোট্ট ছানাটি। বিনতু ও তার ছানাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন নাহার বেগম। এরপর তিনি বিনতুকে খাবার দিলেন। খাবার খেয়ে বিনতু আবার তার নিজের কাজে ফিরে গেল। বিনতু খুবই শান্ত স্বভাবের। কিছুদিন আগে বিনতুর মাত্র একটি ছানা জন্ম নিল। বিনতুর মাত্র একটি ছানা হলেও বিনতু তাকে নিয়ে খুব খুশি। সকালবেলা বিনতুকে খাঁচা থেকে বের করতে একটু দেরি হলেই বিনতু বেজায় চটে যায় এবং চিৎকার করতে শুরু করে। ছাদবাগানে নাহার বেগম ও তার ছেলে রাহীর আরো অনেকগুলো মুরগি আছে। তাদের মধ্যে একটি মুরগির নাম পিংকি। কয়েকমাস আগে পিংকি আটটি বাচ্চা ফুটিয়েছে। পিংকির বাচ্চাগুলো এখন অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছে। পিংকিও বিনতুর মতো খুবই শান্ত স্বভাবের। কিন্তু বিনতুর সাথে পিংকির বন্ধুত্ব হলেও পিংকির ছানাদের সাথে বিনতুর ছানাটির তেমন বন্ধুত্ব হলো না। এভাবেই দিন কাটছিল বিনতুর। প্রতিদিনের মতো আজও নাহার বেগম বিনতুকে খাঁচা থেকে বের করে খাবার দেলেন। এরপর তিনি বাকি মুরগিদেরকেও বের করে খাবার দিলেন। কিন্তু দুপুরবেলায় নাহার বেগম বাসায় না থাকার কারণে তিনি তার ছেলে রাহীকে পাঠালেন। রাহী তাদেরকে খাবার দিয়ে বাসায় চলে এলো। কিছুক্ষণ পর নাহার বেগম বাসায় এলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ছাদের ওপর থেকে বিনতুর চিৎকার শোনা গেল। বিনতুর চিৎকার শুনে নাহার বেগম সাথে সাথেই ছাদে গেলেন। তিনি ছাদে গিয়ে দেখলেন বিনতু নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তিনি বিনতুকে খুঁজে পেলেন না। নাহার বেগম খুবই হতাশ হয়ে গেলেন। বিনতুর ছানাটি তার মাকে হারিয়ে দুই দিন ধরে দুঃখে চিৎকার করল।সে তার মাকে সারাক্ষণ খুঁজে বেড়ায়। তার মা যেসব জায়গাগুলোতে হাঁটতো, সে সেসব জায়গায় হেঁটে হেঁটে তার মাকে খুঁজে বেড়ায়। সে এখন একা থাকে। এমনকি পিংকির ছানাগুলোও তার সাথে মেশে না। তাকে দেখা মাত্রই পিংকির ছানাগুলো তাকে তাড়া করে।সে খাবার খাওয়ার সময় তার মা তাকে খাইয়ে দিত। কিন্তু এখন সে খাবারের এই মজাটা আর উপভোগ করতে পারে না। তার মা তাকে ঘুমানোর সময় তার মায়ের ডানার তলায় পরম আদরে ঘুম পাড়িয়ে দিত। তবে এখন সে আর এই আদর পায় না, মন ভরা দুঃখ নিয়ে ছানাটি তার মায়ের স্মৃতিগুলো মনে করে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে ঘুমায়। নাহার বেগম বিনতুর ছানাটির দিকে খুব খেয়াল রাখেন। সবসময় তিনি ছানাটিকে আগলে রাখেন। এভাবেই মা হারা ছোট্ট নিরীহ ছানাটির দিন কাটতে লাগল।