যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কুখ্যাত খুনিদের একজনের চামড়ায় বাঁধানো একটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে একটি জাদুঘরের কার্যালয়ে। ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে সাফোকের পোলস্টিডে রেড বার্ন গুদামঘরে প্রেমিকা মারিয়া মার্টেনকে খুন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন উইলিয়াম কর্ডার নামের এক ব্যক্তি। তার চামড়া দিয়েই বইটি বাঁধানো বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাফোকের ময়সেস হল মিউজিয়ামে এই বই একইরকম অন্য আরেকটি বইয়ের সঙ্গে প্রদর্শন করা হবে বলে। খবর বিডিনিউজের। হেরিটেজ কর্মকতা ড্যান ক্লার্ক বলেছেন, এই বইগুলোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাছাড়া, মানুষের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রেখে তিনি কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানান। ‘হরিবল হিস্টোরিজ’ রচনা সমগ্রের লেখক টেরি ডেয়ারি অবশ্য এই প্রত্নবস্তুগুলো বীভৎস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এমন দুটো বই–ই তিনি পুড়িয়ে ফেলতে চান।
সাফোকের পোলস্টিডে ১৮২৭ সালের ওই খুনের ঘটনা জর্জিয়ান ব্রিটেনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। তখন থেকেই ঘটনাটি বহু সিনেমা, বই, নাটক এবং লোকগীতির বিষয়বস্তু হয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি চাউর হয়েছে কর্ডারের সঙ্গে মার্টেনের প্রেমকাহিনীর সংস্করণ। এই কাহিনীতে বলা আছে, কর্ডার রেড বার্ন –এ দেখা করার জন্য আসতে বলেছিলেন প্রেমিকা মার্টেনকে। সেখান থেকে পালিয়ে একটি শহরে গিয়ে তারা বিয়ে করবেন বলেও জানিয়েছিলেন কর্ডার। কিন্তু সেই রেড বার্নেই মার্টনকে গুলি করে খুন করেন কর্ডার এবং খড়ের গাদায় পুঁতে দেন লাশ।
১৮২৮ সালের ১১ অগাস্ট কর্ডার ধরা পড়েন এবং প্রকাশ্যেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃতদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা হয় বই। সেই বইয়ে লিপিবদ্ধ ছিল কর্ডারের বিচারের কাহিনী।
১৯৩৩ সালে বইটি জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে সমপ্রতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়করা ক্যাটালগ দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন সেখানে আরেকটি বই রয়েছে যেটি এতদিন চোখে পড়েনি। সেই বইটি জাদুঘরে দান করেছিল একটি পরিবার, যাদের সঙ্গে কর্ডারের দেহ কাটাছেঁড়া করার সার্জনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। বইটি জাদুঘরের গুদামে ছিল না, বরং ছিল কার্যালয়ের বইয়ের শেলফে অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে।
কিন্তু বইটি বাঁধাই করা ছিল অনেক বেশি সনাতনী উপাদান দিয়ে। হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলেন, জাদুঘরে হারানো বই আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেটি দশকের পর দশক ধরে দেখা হয়নি। কর্ডারের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইয়েরর সঙ্গে দ্বিতীয়টির কিছুটা পার্থক্য আছে। প্রথম বইয়ের চামড়ার মলাট অনেকটাই পূর্ণাঙ্গ। আর দ্বিতীয় বইয়ের কেবল বাঁধাইয়ের জায়গা এবং কোনাগুলোতে চামড়া লাগানো আছে। মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাই করা ‘এনথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’ নামে পরিচিত। ‘হরিবল হিস্টোরিজ’ এর লেখক টেরি ডেয়ারির মতে, একজন মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার চেয়েও জঘন্য কাজ হচ্ছে মৃত্যুর পর তার দেহ ছিন্নভিন্ন করা। চামড়া দিয়ে বই বাধাঁনো আরও বাড়াবাড়ি। তবে হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলছেন, দেশজুড়ে প্রতিটি জাদুঘরেই আমরা মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পাই।