নতুন নতুন কর্মসংস্থানের পথ খোলার সম্ভাবনা তৈরি

বিনিয়োগ সম্মেলন :

| বুধবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনের ওপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন যে সব বক্তব্য প্রদান করেছেন, তা বর্তমান সময়ের অর্থনীতির জন্য খুবই জরুরি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলে ভারত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুরসহ কয়েকটি বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন। সম্মেলনে বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ১০০ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো বিদেশিদের মনোভাবে পরিবর্তন আনা। আমরা সেটা করতে পেরেছি। কারণ আমাদের অনেকেই জানিয়েছে গুগল সার্চের বাংলাদেশ আর সরাসরি দেখা বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য অনেক। তিনি বলেন, আমাদের এখন দুটি কাজ। একটি সংস্কার এবং পাশাপাশি একটি পাইপলাইন তৈরি করা। যাতে যারা এখান থেকে ঘুরে গেলেন তাদের বিনিয়োগ যে একটা কাঠামোতে আসে। এর জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলোর একটি হলো একটি ওয়েবসাইট করা, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী প্রবেশ করলে যত দপ্তরের কাজ রয়েছে, সবগুলোর বিষয়ে নির্দেশনা পাবেন কোনটার পর কোনটা করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সব দপ্তর বা মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করবে। বিভিন্ন এজেন্সি যখন একই ছাতার নিচে একসঙ্গে কাজ করবে, তখন বিনিয়োগকারীকে আর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যেসব প্রতিনিধি সম্মেলনে এসেছিলেন, তারা দুটি বিষয় গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেছেন। তার একটি সরাসরি বাংলাদেশে না এলে এর আসল চেহারা জানা যাবে না। সবাই এটাকে দক্ষিণের একটি দেশ হিসেবে গড় বিবেচনায় নেবে। এই ইতিবাচক ধারণাটা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় হলো যারা বিনিয়োগ করতে আগে যোগাযোগ করেছেন, তারা এতটাই স্ট্রাগল করেছেন যে, শুরুটা কোথা থেকে করবেন সেটাই একটা কঠিন বিষয়। এর মধ্যে হয়তো পরিবেশ, গ্যাসের অনুমোদন পেতেই বছর দুই চলে গেছে। তিনি জানান, যেসব প্রবাসী বিভিন্ন দেশে রয়েছেন তাদের মাধ্যমে দেশে কোনো বিনিয়োগ আসলে পরামর্শক ফি হিসেবে কোনো প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে আলোচনা হয়েছে। এখন রেমিট্যান্স যারা পাঠান তাদের ২.৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়।

বিনিয়োগ সম্মেলনে যারা এসেছিলেন তারা বিভিন্ন বাধার কথা বলেছেন। তারা প্রধান চারটি বাধার কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলোসরকারি সেবার মান, ইউটিলিটি সেবার অপ্রতুলতা, দুর্নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলোর বোঝাপড়ায় ঘাটতি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ তার সমজাতীয় এবং রপ্তানিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দীর্ঘদিন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়ে আছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আনতে বহু বছর ধরে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল করেছে অনেক আগেই। সামপ্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করে নতুন করে চেষ্টা করছে। কিন্তু এফডিআই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের মোট এফডিআইর পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম। বিদেশি বিনিয়োগে এমন দুর্বল পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সমপ্রতি ঢাকায় বড় বিনিয়োগ সম্মেলন করেছে। সরকার আশা করছে, পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হলে এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, দেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে দেশিবিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে মিলেছে বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি। দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তিও করছে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া এই বিনিয়োগ সম্মেলনে নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও পথ খুলছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহ কম থাকার পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতা। কিছু পুরোনো আইনকানুনের সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া সামপ্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ বিশেষত মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ কিছু কারণ বিদেশি বিনিয়োগে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে