সাংগ্রাই উৎসবের অন্যতম পর্ব মৈত্রী পানিবর্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একে জলকেলি বা জল উৎসবও বলা হয়। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান শহরজুড়ে এই জলকেলিতে মেতেছেন পাহাড়ি নানা বয়সের মানুষ। শিশু, তরুণ–তরুণী এমনকি বয়স্ক মানুষেরাও একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন। আনন্দ–উদ্দীপনা আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে বর্ণিল হয়ে ওঠে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, পুরাতন বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাংগ্রাই উৎসবে মেতেছে মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ। গত সোমবার সকাল থেকে জেলা সদরের মারমা উন্নয়ন সংসদের মাঠে সমবেত হয় মারমা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সকাল ১০টা মারমা উন্নয়ন সংসদের উদ্যোগে সাংগ্রাইং শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মারমা তরুণ–তরুণীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রা শেষে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করেন মারমা শিল্পীরা। এরপর সাংগ্রাইয়ের মূল আকর্ষণ রি–আকাজা বা মৈত্রী পানিবর্ষণের উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান।
এরপর পুরাতন বছরের গ্লানি মুছতে সাংগ্রাই মৈত্রী পানিবর্ষণে মেতে উঠে মারমা তরুণ–তরুণীরা। নতুন বছরে অনাবিল সুখ আর শান্তি কামনায় জলকেলিতে অংশ নেন তারা।
মারমা উন্নয়ন সংসদের সভাপতি মংপ্রু চৌধুরী বলেন, আজকের এই দিনে মৈত্রী পানি বর্ষণ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মৈত্রী পানি বর্ষণের মাধ্যমে আমরা আজকের এই দিনে আমাদের পার্বত্য জনপদের সকল সম্প্রদায়ের মৈত্রী সুসম্পন্ন হোক।
সাংগ্রাইং উৎসবে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি সদর জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল মো. খাদেমুল ইসলাম, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বান্দরবান : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাইয়ে জলখেলীতে মেতেছে মারমা তরুণ–তরুণীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কুহালং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ায় সাঙ্গু নদীর চরে জলখেলী উৎসবের উদ্ধোধন করেন প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং। এ সময় অন্যদের মধ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হ্লা মেনু, উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি নুমংপ্রু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জলখেলী বা মৈত্রী পানিবর্ষণ প্রতিযোগিতায় কুহালং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়াসহ আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলোর মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ–তরুণীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দলবদ্ধভাবে জলকেলিতে মেতে উঠেন। এছাড়াও মারমা শিল্পীরা নাচে–গানে উৎসব মাতিয়ে তুলেন। নারী–পুরুষের জন্য নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা এবং তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণের আয়োজনও ছিল।
অপরদিকে বান্দরবানের উজানি পাড়া, জাদীপাড়া’সহ পাহাড়ি পল্লীগুলোতে গত সোমবারও রাতব্যাপী হরেক রকমের পিঠা তৈরির প্রতিযোগিতা চলে। রাতে বানানো পিঠাগুলো পাড়া–প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বিতরণ করে তরুণ–তরুণীরা।
আজ বুধবার সাংগ্রাই উৎসবের চতুর্থদিন জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে স্থানীয় রাজারমাঠে, বিকাল তিনটায়। চলবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও।