বৈসাবি উৎসবে রং লেগেছে বান্দরবানে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে। শঙ্কামুক্ত মঙ্গলময় বিশ্ব কামনায় নতুন বছরকে বরণ এবং পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ–জনজাতিগোষ্ঠীরা এই উৎসবের আয়োজন করে। এ উৎসবকে ত্রিপুরাদের ভাষায় বৈসুক, মারমাদের ভাষায় সাংগ্রাই, চাকমাদের ভাষায় বিজু, তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষায় বিসু নামে ডাকা হয়। এরমধ্যে বৈসুকের ‘বৈ’, সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু থেকে ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ বলা হয়।
এদিকে সপ্তাহব্যাপী বৈসাবীর উৎসবের প্রথমদিনে আজ শনিবার সকালে বালাঘাটামুখ পুরনো সাঙ্গু নদীর ঘাটে খরস্রোতা সাঙ্গু নদীতে চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা সমপ্রদায় ফুল ভাসানোর মাধ্যমে বান্দরবান জেলায় মূল অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে। ফুল ভাসাতে সকাল বেলায় নদীরঘাটে জড়ো হবেন তিনটি সমপ্রদায়ের শত শত নারী–পুরুষ, শিশু–কিশোর, তরুণ–তরুণী এবং বয়স্করাও। বিজু উৎসব কমিটির সমন্বয়ক সুফল চাকমা বলেন, পুরনো বছরের যত অমঙ্গল এবং দু:খকষ্ট রয়েছে, সেগুলো ধুয়ে মুছে ফেলতে প্রথমদিনে নদীতে ফুল ভাসান চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা সমপ্রদায়। দ্বিতীয়দিন পাচন মজাদার সব খাবার তৈরি করে অতিথি আপ্প্যায়নের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করি। এ উৎসবে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলা নাটিং খেলা এবং বাশঁহরম প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক আয়োজনে মাতানো হয় চাকমা পল্লীগুলো।
অপরদিকে আগামী সোমবার (১৩ এপ্রিল) সাংগ্রাই শোভাযাত্রার মাধ্যমে মারমা অধ্যুষিত বান্দরবানে ৬ দিন ব্যাপী জমকালো সাংগ্রাই উৎসব শুরু হবে। প্রথমদিনে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠ থেকে আপন ঐতিহ্যে সাজো: বর্ণাঢ্য সাংগ্রাই শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠানমালা। শোভাযাত্রায় মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, চাক, খেয়াং, খুমী, বম, লুসাই, পাঙ্খোয়া‘সহ এগারোটি সমপ্রদায়ের তরুণ–তরুণী এবং শিশু–কিশোরসহ নারী–পুরুষেরা অংশ গ্রহণ করবে।
সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি চনুমং মারমা ও সহ–সভাপতি থুইসিংপ্রু লুবু বলেন, মূল অনুষ্ঠানমালা ছয়দিন। তবে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে উৎসব চলবে আরও কয়েকদিন। প্রথমদিনে সাংগ্রাই শোভাযাত্রা হবে সকালে। তারপর বয়স্ক পূজা, বিহারগুলোতে ছোয়াইং দান হবে। দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার বুদ্ধমূর্তি স্নান, পিঠা উৎসব, মঙ্গল প্রদ্বীপ প্রজ্বলন করা হবে। তৃতীয়দিন হবে স্থানীয় রাজারমাঠে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণ ও লোকজ ক্রীড়া। চতুর্থদিন বুধবার হবে সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ বিকাল তিনটায় স্থানীয় রাজারমাঠে মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলী উৎসব, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। পঞ্চমদিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারও অনুষ্ঠিত হবে জলকেলী উৎসব। মারমা জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলব রাতে। পাহাড়ের এ উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পাহাড়ী–বাঙালী ধর্মবর্ন সকলেই উপভোগ করতে পারবেন। সাংগ্রাই হচ্ছে মারমা সমপ্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। এ প্রসঙ্গে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো: শহীদুল্লাহ্ কাওছার বলেন, পাহাড়ের বৈসাবী উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি উৎসব আয়োজন কমিটির পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।