উৎপাদনে বিপ্লব, দাম তলানিতে

মহেশখালীর পান চাষিদের দুর্দিন

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

মিষ্টি পান চাষের জন্য বিখ্যাত দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মিষ্টি পান চাষিরা এবার পান উৎপাদনে বিপ্লব ঘটালেও হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়ে গেছেন। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে পানের মূল্য অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। ফলে উৎপাদন খরচ দূরের কথা, বরজ থেকে পান তুলে আনার শ্রমিকের মজুরিও উঠে আসছে না বিক্রির টাকায়। এতে ক্রান্তিকাল পার করছেন মহেশখালীর পান চাষিরা। কালারমার ছড়া ইউনিয়নের পানচাষি আব্দুর রহমান জানান, গত বছর বড় আকারের প্রতিটি পানের বিরা ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই পান গত দুই মাস ধরে বিক্রি হচ্ছে বিরা প্রতি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়।

সরেজমিনে গিয়ে পান চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর পান বিক্রিতে চড়া মূল্য পাওয়ায় চলতি বছর সমতল ভূমিতে মৌসুমী পান চাষে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে উপজেলার হোয়ানক, কালারমারছড়া, বড় মহেশখালী, শাপলাপুরএই চারটি ইউনিয়নের ১৪শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮ হাজার পান বরজ করেছে অন্তত ১৩ হাজার চাষি। এতে করে ১৩ হাজার পান চাষি পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও দাম কমে যাওয়ায় তারা হতাশগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

পান চাষিরা জানান, এবারে পান চাষে বিপ্লব ঘটলেও দাম কমে যাওয়ায় লাভের আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান বাজারে পান চাষের যাবতীয় সামগ্রী ও সারের দাম অনেক বেড়েছে। এতে করে সাধারণ গরিব কৃষকরা পান চাষ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সরকারিভাবে প্রান্তিক পান চাষিদের সহজ শর্তে ঋণদানের ব্যবস্থা করা গেলে সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব হত।

মহেশখালী উপজেলা পান চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, মহেশখালীর মিষ্টি পান শুধু এ দ্বীপে নয়, সারা বাংলাদেশে অতিথি আপ্যায়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বলেই চট্টগ্রামের বিখ্যাত শিল্পী শেফালী ঘোষ গেয়েছেন– ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম মইশখালীর পানর খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম’। এই মিষ্টি পানের চাষিরা আজ দিশেহারা। অস্বাভাবিক হারে পড়ে গেছে পানের দাম। চাষিরা মৌসুম শুরুর আগে বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে পান চাষে নেমে এখন ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি পান চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান। মহেশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ দ্বীপের প্রায় ১৪০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে প্রায় ৮ হাজার পান বরজ আছে। পান চাষির সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। প্রসঙ্গত, পান চাষ মহেশখালী দ্বীপের অধিবাসীদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন পেশা। মহেশখালীর পাহাড়ি এলাকা পান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হলেও বর্ষার শেষে দ্বীপের সমতল ভূমিতে হয় মৌসুমী পান চাষ। মহেশখালীর মিষ্টি পান সারা দেশে বিখ্যাত হওয়ার পেছনের রহস্য হচ্ছেএই দ্বীপের পানে রয়েছে মিষ্টি স্বাদ। মিষ্টি পান ছাড়াও এ দ্বীপে কিছু পরিমাণ সাচি পানের চাষও হয়। মহেশখালীর পানের বরজ দুই ধরনেরপাহাড়ি বরজ ও বিল বরজ বা মৌসুমী পানের বরজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে কমছে মিষ্টি আলুর চাষ
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ