মীরসরাইয়ে কমছে মিষ্টি আলুর চাষ

পাঁচ বছরে চাষাবাদ নেমেছে ৯০ হেক্টর থেকে ৩০ হেক্টরে

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

কৃষি প্রধান মীরসরাইয়ে কমছে মিষ্টি আলুর চাষাবাদ। বিগত কয়েক বছরে গ্রামীণ জনপদের বহুমুখী উপাদেয় ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার লাল আলুর চাষাবাদ ৯০ হেক্টর থেকে কমে ৩০ হেক্টরে নেমেছে। উপজেলার করেরহাট ও হিঙ্গুলীসহ কয়েক ইউনিয়ন ব্যতিত এবার অনেক এলাকায় চাষও হয়নি।

উপজেলার সোনাপাহাড় গ্রামের কৃষক রবিউল হোসেন (৫৫) বলেন, গত ১০ বছর আগেও এখানকার আলু স্থানীয় বাজারের পাাশাপাশি পাইকারদের মাধ্যমে যেত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে ৫ বছর আগেও এই অঞ্চলের বড় হাট বড়দারোগার হাট ও মিঠাছরা বাজারে রেকর্ড পরিমাণ মিষ্টি আলু বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে তা কমতে শুরু করেছে।

মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম জানান, এবার উপজেলায় আলু চাষ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন অনেক চাষি। তিনি আরো জানান, গত ৫ বছর পূর্বেও এখানে ৯০ হেক্টর পর্যন্ত লাল আলু চাষ হয়েছে। কমতে কমতে এবার মাত্র ৩০ হেক্টর আলু চাষ হয়েছে। এর কারণ হিসেবে কৃষি কর্মকতা বলেন, কৃষকরা আমাদের কৃষি মাঠ কর্মীদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা না নেওয়ায় ফলন কমছে। তবে এক কৃষক উল্টো অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরাই নির্ধারিত কিছু কৃষক ছাড়া আমাদের মতো প্রান্তিক কৃষকদের খোঁজ ও রাখেন না। চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে থেকে শুরু হয় মিষ্টি আলুর চারা বপন। ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ক হয়। আর চৈত্রবৈশাখ মাস আলু তোলায় ব্যস্ততা থাকে চাষিরা। প্রাকৃতিক এই নিয়মানুযায়ী, বৈশাখ সমানে রেখে করেরহাট এলাকার ঘেড়ামারাসহ কয়েকটি গ্রামে অনেক আলু চাষিই এখন ব্যস্ত তাদের আলু তুলে হাটে নিতে। এবার আগাম বৃষ্টি নেই, তাই আলু ক্ষেতের কোন প্রকার ক্ষতিও হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লাল আলু চাষিরা রোদের তেজ উপেক্ষা করে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করে রাখছেন। মিষ্টি আলু নিতে আসা ব্যাপারিরা ক্ষেতে বসেই আলু মেপে বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে নিয়ে রেখেছেন। সোনাপাহাড় গ্রামের কৃষক আমিন রসুল (৫২) জানান, ৬ গন্ডা জমিতে লাল আলু রোপন করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। বিক্রি করবেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার আলু। নিজেদের পরিশ্রমের টাকা ছাড়াও কিছু লাভ থাকবে আশা করছেন।

এদিকে বাজারে গোল আলুর দাম ২০ টাকা। কিন্তু মিষ্টি আলুর দাম ৩০ টাকা। সেই তুলনায় গোল আলু থেকে মিষ্টি আলুর দাম ভাল পাচ্ছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষাবাদ কমলেও মিষ্টি আলুর ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো থাকায় কৃষকেরা খুশি। আগামীতে ফলন আবার বৃদ্ধি করার বিষয়ে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

হলুদ আর কমলা শাঁসযুক্ত এই মিষ্টি আলু পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রনে ভরপুর। কৃষি বিজ্ঞানীদের দাবি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই আলু। আলু চোখ ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে, চামড়া ভালো থাকে, ত্বকের বয়স কমায় ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপানি শূন্য খাল, বৃষ্টির আশায় আকাশ পানে চেয়ে কৃষক
পরবর্তী নিবন্ধউৎপাদনে বিপ্লব, দাম তলানিতে