খাল-নালায় ময়লা ফেললে হবে শাস্তি

রেলের কর্মীরাই রেলের শত্রু লোডশেডিং আগে ঢাকায় হবে সাংবাদিকদের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

খালনালায় ময়লা ফেলা রোধে সচেতনতামূলক সভার মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, নগরে যে খালগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে সেগুলো আবার ভরাট হয়ে গেছে দেখে খারাপ লেগেছে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত জনগণকে এখানে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বিভাগীয় কমিশনার এলাকায় এলাকায় মতবিনিময় সভা করবেন, যাতে কেউ খালে ময়লা না ফেলে। আমরা চেষ্টা করছি ময়লা ফেলার জন্য ২০ হাজার বিন দেয়ার। যারা বিন বানায় অলরেডি তাদের সাথে আলাপ করেছি, তারা আমাদের কোটেশন দিবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও অনুরোধ করছি, তারা দিবে। জনগণককে উদ্বুদ্ধ করা এবং বিন দেয়ার পরও যদি খালে কেউ ময়লা ফেলে তাহলে কিন্তু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি এবার জলাবদ্ধতা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জলাবদ্ধতা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। বৃষ্টির পরিমাণ কেমন হবে তা একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে এই দুর্ভোগ এবার অনেকটা লাঘব হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম ও নগরের বিভিন্ন সেবা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ।

ব্রিফিংকালে উপদেষ্টা জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রেলের বিভিন্ন সমস্যা, চট্টগ্রামকক্সবাজার সড়ককে ছয় লেনে উন্নীতকরণ ও লোডশেডিং নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

চট্টগ্রামকক্সবাজার সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করতে সময় লাগবে : শুরুতে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামকক্সবাজার সড়ককে ছয় লেন করার দাবি জানান। এরপর মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রামকক্সবাজার সড়কককে ছয় লেনে উন্নীত করা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, রাস্তা বাড়াতে হলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণে সময় লাগবে। এলএ কেস করতে হবে, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যতই তাড়াতাড়ি করি না কেন দুইতিন বছরের আগে তো হবে না। কিন্তু এর মধ্যে দুর্ঘটনা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অংশে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। সতর্ক করে সাইন পোস্ট দেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানো হবে। চালকদের সচেতন করা হবে, যাতে স্পিডে গাড়ি না চালান। লবণ গাড়ি যাচ্ছে, এগুলোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এরপর উপদেষ্টার নির্দেশে চট্টগ্রামকক্সবাজার সড়ক ছয়

লেনে উন্নীত করা প্রসঙ্গে উপদেষ্টার নির্দেশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সড়কের দৈর্ঘ্য ১৪৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৬ কিলোমিটার চার লেন করেছি। বাকি ১৩০ কিলোমিটারকে ছয় লেন করার প্রকল্প চলছে। এখানে পাঁচটি প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পাশ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে পটিয়া বাইপাস, দোহাজারী, কেরানীহাট, লোহাগাড়া এবং চকরিয়া। এখানে চারটি বাইপাস ও একটি ফ্লাইওভার করব। বাকি যে অংশ সেখানে মাতারবাড়ি থেকে করার জন্য জাইকার সঙ্গে এমওইএ স্বাক্ষর হয়েছে। জাপানি কনসালটেন্ট স্টাডি করছে, সেটা সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। এরপর ডিসেম্বরে ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে। আগামী জানুয়ারিতে জাইকার সঙ্গে চুক্তি করে কাজ শুরু করতে পারব।

এসময় সড়কটির বিভিন্ন অংশে বাঁক সরলীকরণ করা হবে বলেও জানান এ প্রকৌশলী। তিনি সড়কটিতে সিএনজি চলাচল বন্ধের প্রস্তাব করেন। তখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার নিদের্শনা দেন উপদেষ্টা।

রেলের শত্রু রেলের কর্মীরা :

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা চট্টগ্রাম শহরের অনেক দীঘি এবং জলাশয় হারিয়ে ফেলেছি। নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত পার্ক এবং জলাশয় দরকার। ওনারাই মন্ত্রণালয়ের (রেলপথ মন্ত্রণালয়) যে দীঘিগুলো আছে; আগ্রাবাদ ডেবা ও ভেলুয়ার দীঘি যদি আমাদের দেয় তাহলে সেগুলো আমরা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে করে দিতে পারি। এগুলো পেলে জনগণের মেয়র হিসেবে আমার জায়গা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করব।

তিনি বলেন, সিআরবি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে। এখানে রাস্তাটা করা জরুরি। আমি যতবারই করতে গিয়েছি রেলওয়ে থেকে বলা হয়েছে ওটা ওনাদেরই রাস্তা। এই রাস্তাটা দ্রুত হওয়া উচিত।

এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, রেলকে রেলের কাজে মনোযোগ দিতে হবে। রেল চট্টগ্রাম শহরের অংশ, বাংলাদেশের অংশ। আলাদা কিছু না। আমরা আলাদা; এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে। তিনি বলেন, রেলের কাজ হচ্ছে ট্রেন পরিচালনা করা। প্রতিনিয়ত সেবার মান বাড়ানোর কাজ করতে হবে। রাস্তা করা ও পানি সরবরাহ করা রেলের কাজ নয়। এসব করতে গিয়ে রেলের দক্ষতা নষ্ট হয়। অর্থের অপচয় হয়। রেলের শত্রু রেলের কর্মীরাই। সিটি কর্পোরেশন রাস্তা করতে চাইলে, ওয়াসা পানি দিতে চাইলেও রেল নিতে চায় না। তবে এখন থেকে তা হবে না। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সিটি কর্পোরেশন রাস্তা করে দেবে। ওয়াসা পানি সরবরাহ করবে।

লোডশেডিং প্রথমে ঢাকায় হবে : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং যেন কম হয় সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার। যদি লোডশেডিং হয়, আগে ঢাকা শহরে হবে। পরে দেশের অন্য জায়গায় হবে। আগের মতো শুধু গ্রামে হবে না।

তিনি বলেন, দুই কারণে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। উৎপাদন কম হলে যদি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন সেটি লোডশেডিং। আর ঝড় বৃষ্টিসহ কোনো কারণে যদি ফিউজ চলে যায়, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সেটি বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। রমজানের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়তো সম্ভব হবে না। তবে আমরা চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। এ জন্য আমরা এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রিতে রাখতে বলেছি। এটা রাখতে পারলে একদুই হাজার চাহিদা কমবে। এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

তিনি বলেন, নগর উন্নয়ন শুধু অবকাঠামোতেই সীমাবদ্ধ নয়, নাগরিক সচেতনতা এবং অংশগ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামকে আধুনিক ও বাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে হলে আমাদের অবশ্যই পরিকল্পিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুলিশের লোগো পাল্টাচ্ছে, বাদ যাচ্ছে নৌকা
পরবর্তী নিবন্ধবাঙালির পাতে কি ইলিশ উঠবে