বায়ুদূষণ বর্তমানে একটি আতংকে পরিণত হয়েছে

| শুক্রবার , ১১ এপ্রিল, ২০২৫ at ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

দূষণের কবলে আমাদের সমগ্র বাংলাদেশ। শুধু চট্টগ্রাম নগর নয়, দেশের প্রায় সব বড় বড় শহরগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। করোনা মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষ এবং যানবাহনের চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া এবং ধূলি ধূসরিত রাস্তাগুলো থেকে উৎসারিত ধূলি কমে গিয়েছিল। ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও শব্দদূষণ যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। কিন্তু আবারও মানুষের জীবনযাত্রা এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসার পরে নতুন করে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে পরিবেশ, বায়ু এবং শব্দদূষণ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়ে চলেছে বায়ুদূষণের মাত্রা। দিন দিন ঢাকার বাতাস দূষিত হয়ে উঠছে। টানা কয়েক দিন বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর ছিল। ২৩৪ স্কোর নিয়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে ভারতের শহর ‘দিল্লি’, যা এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। একই সময়ে ১৭৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের শহর ‘হ্যানয়’। ২০২ স্কোর নিয়ে অস্বাস্থ্যকর শহরের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের শহর ‘বেইজিং’। আর ৮০ স্কোর নিয়ে এ তালিকার ২৮তম অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ‘ঢাকা’। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ যেমন কমছে, তেমনি বিভিন্ন ক্ষুদ্র কণাসহ ক্ষতিকর নানা গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ বাড়ছে। নিশ্বাসের সঙ্গে এসব ক্ষতিকর পদার্থ টেনে নেওয়ায় আমাদের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। এর কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে। একইসঙ্গে বাড়ছে ক্যানসারসহ আরও অনেক শারীরিক সমস্যা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুই ঘটে হার্ট অ্যাটাক থেকে আর বাকি ২৫ শতাংশ ফুসফুস রোগে মারা যায়। বায়ু দূষণের মাত্রা এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। হেলথ ইফেক্টস ইন্সটিটিউটের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায় শুধু বায়ু দূষণের কারণে। সর্বত্র গাড়ির ধোঁয়া, না হয় কলকারখানার ধোঁয়া। তবে এসবের চেয়েও বেশি দূষণ করছে নগরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটভাটাগুলো। ফলে যেদিক থেকেই বায়ু প্রবাহিত হোক, দূষিত বায়ু প্রবেশ করছে শহরে। এ যেন দূষণের মেলা চলছে বাতাসে!

বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রথমেই প্রভাব পড়ে শ্বাসযন্ত্রের উপরে। দূষিত বায়ুর কণা এতোটাই ক্ষুদ্র যে এটি সহজেই মানুষের চোখ নাক মুখ দিয়ে ঢুকে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ফুসফুস, হার্ট, কিডনি, লিভার ইত্যাদি আক্রান্ত করে থাকে। বায়ুদূষণে দেশের এমন দুঃসহ পরিস্থিতি হওয়া সত্ত্বেও তেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বায়ুদূষণ বর্তমানে একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। সেই হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে কারখানাগুলোর ধোঁয়া কমিয়ে আনা; কারখানাগুলো শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া; ট্রাফিক জ্যামের সমাধান করা; উন্নত জ্বালানি ব্যবহার করা; এয়ার কন্ডিশনার কম ব্যবহার করা; প্রচুর বনায়ন করা যেতে পারে, কারণ গাছ বায়ুদূষণ প্রতিরোধে জোরালো ভূমিকা রাখে; বাড়িঘর ও আবাসিক এলাকায় পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা, যেখানে উদ্যান ও পুকুর থাকবে; শুষ্ক মৌসুমে দূষিত শহরে দুইতিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা; নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নেওয়া; রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাক ব্যবহার করা; অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির সেন্ড ব্লকের প্রচলন বাড়ানো; ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি। বাস্তবিক অর্থে আমাদের বেঁচে থাকতে হলে বায়ুদূষণ কমাতে হবে। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হওয়া দরকার। দূষণরোধ করার জন্যে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে