পড়ালেখা শেষে চাকরি করে অভাবের সংসারে সহযোগিতা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল মেধাবী কলেজ শিক্ষার্থী তামান্না নাহিদ ইয়া প্রকাশ আরজু আক্তারের (১৯)। পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় নিজের ইচ্ছাশক্তিতেই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল আরজু। পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে গত বছর ৪.৩৩ পয়েন্ট নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তিও হয়েছে। তার পিতা কৃষক আনোয়ার হোসেন চাষাবাদের পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় গরু লালন–পালন করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। বাবার কাজে সহযোগিতা করতো আরজু। নিহত আরজুর পড়ার টেবিলে পড়ে থাকা একাডেমিক সার্টিফিকেট ও বইপত্রগুলো দেখে দেখে কথাগুলো বলছিলেন তার মা রওশন আরা বেগম। কৃষক আনোয়ার হোসেন ও রওশন আরা দম্পত্তির ৩ কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের মধ্যে আরজু ২য় সন্তান। এক কন্যার বিয়ে দিয়েছেন ২ বছর আগে। তৃতীয় কন্যা সানজু আকতার মুজাফরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সর্বকনিষ্ঠ পুত্র আবদুল্লাহ আল রোহান পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে। চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের রওশনহাট থেকে পূর্ব দিকে পাহাড়ি এলাকা পূর্ব এলাহাবাদে আরজুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই কক্ষের একটি সেমিপাকা ঘরে বসবাস তাদের।
আরজুর মা রওশন আরা জানান, তার মেয়ে পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় পরিবারের সামর্থ না থাকা সত্বেও সে নিজের ইচ্ছাশক্তিতেই পড়ালেখা করছিল। আরজু প্রায় সময় বলতো পড়ালেখা শেষে সে ব্যাংকে চাকুরি করবে এবং অভাবের সংসারে সহযোগিতা করবে। ছোট দুই ভাই–বোনের পড়ালেখার দায়িত্ব নেবে। কিন্তু পাষন্ড নাজিম উদ্দীন আমার মেয়ের সব স্বপ্ন শেষ করে দিলো। তাকে বাঁচতে দিলো না।
আরজুর বাবা কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তার মেয়ে গত ৩ এপ্রিল নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে পাষন্ড নাজিমের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার ওপর। আরজু বিষয়টি তার নানা–নানীকে জানালেও সম্পর্কে তারা মামা–ভাগ্নি হওয়ায় বিষয়টি আমলে নেননি তারা। গত ৮ এপ্রিল তার মেয়ে রাতে নানা বাড়ির বসতঘর সংলগ্ন টয়লেটে গেলে পাষন্ড নাজিম পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে টয়লেটে গিয়ে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় মেয়ে বাধা দিলে তার পরিহিত ওড়না মুখে গুজে ও গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে এবং তার নানা–নানীকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। তিনি পাষন্ড নাজিম উদ্দীনকে গ্রেপ্তার ও তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।