বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে কাজে লাগাতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, পরিবেশ যদি স্থিতিশীল থাকে, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। দৈনিক আজাদীর ৮ এপ্রিল সংখ্যায় ‘কেইপিজেডে শিল্প সম্ভাবনা দেখলেন ৬০ বিদেশি বিনিয়োগকারী’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠিত কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখলেন বিদেশি ৬০ বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা শিল্পবান্ধব পরিবেশ, তুলনামূলক কম মজুরি, শিল্প এলাকার সবুজায়ন, অবকাঠামোগত সুবিধা দেখে মুগ্ধ হন। এসব বিবেচনা মাথায় রেখে কেইপিজেডে শিল্পায়নে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা।

গত সোমবার সকালে বিমানে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে টানেল ঘুরে কেইপিজেডে আসেন ৬০ বিদেশি বিনিয়োগকারী। বিনিয়োগ ও শিল্প সম্ভাবনা যাচাইয়ে আসা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পদচারণায় মুখর ছিল কেইপিজেড এলাকা।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট২০২৫ শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। চারদিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিন সোমবার কেইপিজেড পরিদর্শন করেছেন চীন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিনিয়োগকারী। সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেইপিজেড শিল্পজোনের টেক্সটাইল, কেপিপি, আর্ট গ্যালারি, টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল, আইটিসহ কেইপিজেডের বিভিন্ন শিল্পকারখানা পরিদর্শন করেন। এ সময় কেইপিজেডের চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সাং, বিডা ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সাথে ছিলেন। তারা বিনিয়োগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিডা জানায়, মূলত বাংলাদেশের শিল্পজোনসমূহের বাস্তব চিত্র, কারখানার পরিবেশ সরাসরি পরিদর্শনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করা এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

প্রতিবেদনে অর্থনীতিবিদদের অভিমতও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে কোরিয়ান এ শিল্পজোনে আরো লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্প, বিনিয়োগ সমপ্রসারণ ও কর্মসংস্থানে এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। আনোয়ারায় বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হলে টানেলে গাড়ি চলাচলে প্রভাব পড়বে।

এদিকে, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দেশে আগে কখনো এত অনুকূল পরিবেশ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ এপ্রিল চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত আট মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করেছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দেশে আগে কখনো এত অনুকূল পরিবেশ ছিল না।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রবর্তিত বিনিয়োগ পরিবেশ, বাণিজ্য এবং শ্রমসম্পর্কিত সংস্কার বাংলাদেশে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে এবং চীনা ও দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন কারখানা দেশে স্থানান্তরকে সহজতর করবে।

. মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে তার সামপ্রতিক বৈঠকের বিষয়টিও তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্ট শি শীর্ষ চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য তার প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার আহ্বানে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

আসলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা কোনো সময়ই সারা পৃথিবীতেই কোনো জায়গায় বিনিয়োগ করতে চাইবে না যদি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকে। এবং অনেকেরই আমাদের সাথে তো কথাবার্তা হয়, দেশিবিদেশি বিনিয়োগকারীদের। তারা বলেছে যে ইলেকশনের আগে তারা নতুন বিনিয়োগ করার কথা ভাবছে না। এটা দুশ্চিন্তার কারণ। বিনিয়োগের মাধ্যমেই তো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সিপিডির জরিপে ১৭টি সমস্যা সামনে এসেছে, এর মধ্যে দুর্নীতি এক নম্বর। ব্যবসায়ীরা বলতে পারছে না সরাসরি কারণ। ধরেন ব্যবসা যারা করেন, সেনসিটিভিটির মধ্যে থাকেন, তারা ভয়ের মধ্যে থাকেন যে কী বলতে কী বলে ফেলি। আবার ব্যবসার ক্ষতি হয় কিনা। আবার এখন তো দেখা যাচ্ছে আমরা অন্য ধরনের স্বাধীন অবস্থার মধ্যে রয়েছি যে কোনো একটা বক্তব্য পছন্দ হলো না, একটা মব জাস্টিসের মধ্যে পড়ে যায় অনেকে। তারা তো ওইরকম রিস্কের মধ্যে যেতে চায় না। যদি ভাঙচুর হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের ব্যবসা তো বন্ধ হবে। পরিস্থিতি খারাপ হবে। ওখানে যারা কাজ করে তাদেরও।’ তাই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে কাজে লাগাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে